যুক্তরাজ্যের বাড়ির বাজার যেখানে ক্রমাগত নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, সেখানে ল্যাঙ্কাশায়ারের ছোট শহর বার্নলি হয়ে উঠেছে সাশ্রয়ী জীবনযাত্রার এক অনন্য উদাহরণ। মাসিক আয়, বাড়িভাড়া এবং সম্পত্তিমূল্য বিবেচনায় সম্প্রতি Investing Insiders পরিচালিত একটি সমীক্ষায় বার্নলিকে যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে সস্তা শহর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিস (ONS) জানায়, ২০২৫ সালের মে মাসে বার্নলিতে গড় বাড়ির দাম ছিল মাত্র ১ লাখ ২১ হাজার পাউন্ড, যা জাতীয় গড়ের (২ লাখ ৬৯ হাজার পাউন্ড) তুলনায় অর্ধেকেরও কম। শহরের গড় মাসিক ভাড়া মাত্র ৬০৭ পাউন্ড। এমনকি Rightmove–এর তালিকায় থাকা সবচেয়ে সস্তা সম্পত্তির মূল্য মাত্র ২৫ হাজার পাউন্ড—একটি এক শয্যার টেরেসড হাউস।
শিল্পবিপ্লবের ইতিহাসসমৃদ্ধ বার্নলি এখনো দাঁড়িয়ে আছে প্রকৌশল ও উৎপাদন খাতের ভিত্তির উপর। এখানে রয়েছে Safran Nacelles ও AMS Neve–এর মতো আন্তর্জাতিক কোম্পানি, যারা চলচ্চিত্র ও সংগীত প্রযুক্তির বিশ্বনেতা।
Barnley Place-এর ব্র্যান্ড ম্যানেজার র্যাচেল বেইলি বলেন, “এই শহরে অসাধারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কাজের সুযোগ রয়েছে। এখানকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ গ্র্যাজুয়েটরা এখন আর শহর ছাড়ছেন না—কারণ বার্নলিতে বাড়ি কেনা সত্যিই সম্ভব।”
কোভিড-পরবর্তী সময়ে বার্নলির টাউন সেন্টার যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় সেরা পুনরুদ্ধারকারী হাইস্ট্রিট হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দিনে দুপুরে খোলা আকাশের নিচে মার্কেট এলাকায় মানুষের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো।
অথচ এই সাশ্রয়ী শহরে গত এক বছরে সম্পত্তিমূল্য বেড়েছে ৪.৪%, যা নর্থ ওয়েস্ট অঞ্চলের গড় (৩.৩%) বৃদ্ধির চেয়েও বেশি। তুলনায়, ম্যানচেস্টারে বাড়ির দাম বেড়েছে মাত্র ৩.২%, যেখানে গড় দাম এখন ২ লাখ ৫৭ হাজার পাউন্ড।
Antwisell Green–এর এস্টেট এজেন্ট গ্যারি ট্র্যাপে জানান, কোভিড-পরবর্তী সময়ে অনেকেই বার্নলিতে চলে এসেছেন। এর প্রধান কারণ সাশ্রয়ী আবাসন এবং ম্যানচেস্টার ও লিডসের সঙ্গে ভালো যোগাযোগব্যবস্থা। তিনি বলেন, “ভাড়া গত কয়েক বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে, তাই এখন অনেকের জন্য বাড়ি কেনাই বেশি লাভজনক।”
স্থানীয় ব্যবসায়ী কিথ জ্যাকসন, যিনি আজীবন বার্নলিতে বসবাস করছেন, শহরের সবুজ প্রকৃতি ও সামাজিক বন্ধনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি বিরল শহর যেখানে পাঁচটি পার্ক রয়েছে। কর্মসংস্থান, প্রকৃতি আর আন্তরিক সমাজ—সব কিছু মিলিয়ে বার্নলি বসবাসের জন্য অসাধারণ।”
শহরে ইতোমধ্যেই বড় পরিসরে উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। সেন্ট জেমস স্ট্রিট এলাকায় চলছে বহু মিলিয়ন পাউন্ডের পুনর্গঠন, আর ২০০ মিলিয়ন পাউন্ডের “বার্নলি টাউন সেন্টার অ্যান্ড ক্যানালসাইড মাস্টারপ্ল্যান” এর আওতায় ২০২৮ সালের মধ্যে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া টাউন সেন্টার ও ফুটবল স্টেডিয়ামের মধ্যে সংযোগ উন্নয়নে ৬ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
যেখানে যুক্তরাজ্যের অনেক শহরে জীবনযাত্রার ব্যয় উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে, সেখানে বার্নলি এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ। সবুজ খোলা পরিবেশ, চাকরির সুযোগ এবং সাশ্রয়ী বসবাস—সবকিছু মিলিয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে শহরটি হয়ে উঠছে নতুন সম্ভাবনার ঠিকানা।
সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস