সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর, যেখানে একসময় নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে পাথরের ওপর হাঁটতে হতো অসংখ্য পর্যটককে, সাম্প্রতিক সময়ে ভয়াবহ অবৈধ উত্তোলনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। রাতের অন্ধকারে শতশত ট্রাক পাথর চুরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
দীর্ঘ নীরবতার পর প্রশাসন অবশেষে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। র্যাব, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও হাইকোর্টের উদ্যোগে তিন ধাপে মোট ৪৯ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) উদ্ধার হয়েছে ১২ হাজার ঘনফুট, বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ৩৫ হাজার ঘনফুট, আর গোয়াইনঘাটের জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে পাওয়া গেছে ২ হাজার ঘনফুট পাথর। এসব পাথর পুনরায় সাদা পাথর এলাকার নদীতে ফেলা হচ্ছে।
লুটপাটের শিকড় ঢাকায়ও পৌঁছেছে। ১৪ আগস্ট রাতে কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন ডেমরার সারুলিয়ায় র্যাব-১১ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে আরও ৪০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়, যার বেশিরভাগ ক্রাশ করে রাখা হয়েছিল।
এ পর্যন্ত মোট উদ্ধারকৃত পাথরের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ঘনফুট। তবে র্যাবের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২ লাখ ঘনফুট পাথর এবং ৬ লাখ ঘনফুট বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ উদ্ধারকৃত পরিমাণ মোট লুট হওয়া পাথরের মাত্র ৪৪.৫ শতাংশ।
অপরদিকে, সিলেটের সদর উপজেলার ধোপাগুল-লালবাগ, সালুটিকর ও ভোলাগঞ্জে অভিযান চালিয়ে নতুন কৌশল বের করেছে প্রশাসন। ব্যবসায়ীরা ক্রাশার মেশিনে রাখা পাথরের ওপর মাটি ও বালু ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছে, এমন ঘটনা ধরা পড়েছে ধোপাগুল শহীদ মিনার এলাকার একটি মিলেও।
হাইকোর্ট সাদা পাথর লুটকারীদের তালিকা জমা দেওয়ার এবং সাত দিনের মধ্যে সব পাথর পূর্ববর্তী স্থানে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পরবর্তী রিটের শুনানি হবে ১৭ আগস্ট।
দলমত নির্বিশেষে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি অবৈধ উত্তোলনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এ ঘটনায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ স্থগিত করা হয়েছে। সিলেট জেলা ও মহানগর জামায়াত নেতৃবৃন্দও লুটপাটের তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
একসময় মনোরম পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর এখন উদ্ধার অভিযানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নদীর প্রবাহ ও পাথরের সারি যেন অপেক্ষা করছে আবার সেই আগের সৌন্দর্য ফিরে পাওয়ার জন্য—যা এখন সবার জন্য এক গভীর প্রশ্ন।