নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আলোচিত আওয়ামী লীগনেতা সুরুজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিসহ চার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আজ রোববার (৩০ জুন) সকালে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে র্যাব-১১ সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- প্রধান আসামি কাশিপুরের আলাউদ্দিন ওরফে হীরা (৩৫), পশ্চিম ভোলাইলের মো. আল আমিন (২২), একই এলাকার মো. রাসেল (২০) ও মো. সানি।
সিইও জানান, র্যাব ১১-এর একটি আভিযানিক দল গতকাল শনিবার সদরের সৈয়দপুর থেকে সুরুজ মিয়া হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ওরফে হীরাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে অপর তিন আসামিকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভিকটিম সুরুজ মিয়ার সঙ্গে প্রধান আসামি আলাউদ্দিন ওরফে হীরা এবং তাঁর ভাই সালাউদ্দিন ওরফে সালুর আগে থেকেই বিরোধ ছিল।
ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গ্রেপ্তার করা আসামি হীরা ও তার ভাই সালু এলাকার একটি নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে মালিকের কাছে চাঁদা দাবি করেন। ওই ভবনের মালিক এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি হিসেবে ভিকটিম সুরুজ মিয়ার কাছে বিচার দেন। সুরুজ মিয়া আসামি হীরা ও সালুর বাবাকে বিষয়টি অবহিত করেন এবং হীরা ও সালুকে চাঁদাবাজি থেকে বিরত থাকতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন তাঁরা।
এর জেরে গত ২৭ জুন দুপুরে সুরুজ মিয়া আলীপাড়া জামে মসজিদে সামনে হীরার নেতৃত্বে অজ্ঞাত পরিচয় ২০-২৫ জন প্রথমে ভিকটিমের বড় ছেলে রাজু (৪৩) এবং ছোট ছেলে জনির (৪১) পথরোধ করে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। হামলাকারীদের প্রত্যেকের হাতে রামদা, বগিদা, ছোরা, লোহার রড ছিল। একপর্যায়ে গ্রেপ্তার আসামি হীরার হাতে থাকা রামদা দিয়ে রাজুর মাথায় কোপ দিতে গেলে রাজু হাত দিয়ে ঠেকিয়ে গুরুতর জখম হন। এ সময় অন্য আসামিরাও রাজু ও জনিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করতে থাকে। নামাজ শেষে সুরুজ মিয়া ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এলে তার উপরও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। আত্মরক্ষার্থে সুরুজ মিয়া হামলাকারীদের একজনের হাত থেকে রামদা ছিনিয়ে নিলেও সন্ত্রাসীরা তার মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গ্রেপ্তার করা আসামি হীরার বিরুদ্ধে ফতুল্লা থানায় হত্যাচেষ্টা, গুরুতর জখম, ডাকাতি, চুরিসহ কমপক্ষে ১০টি মামলা ও বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। অপর দুই আসামি মো. আলআমিন ও মো. রাসেলের বিরুদ্ধেও একই থানায় মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের দায়ে একাধিক মামলা ও জিডি রয়েছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র্যাব। এ ছাড়া অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানানো হয়।
এর আগে এ মামলায় এজাহারনামীয় আসামি বাপ্পী ও জামালকে শনিবার গতকাল দুপুরে গ্রেপ্তার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ। এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ছয়জনে।
গত শুক্রবার (২৮ জুন) দিনগত রাতে নিহত সুরুজ মিয়ার ছেলে মুন্না বাদী হয়ে সন্ত্রাসী আলাউদ্দিন ওরফে হীরা, সালু, তমাল, সফর আলীসহ ২১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
নিহত সুরুজ মিয়া ফতুল্লার কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি আলীপাড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতিও ছিলেন।