আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ভারতে আশ্রয় নেওয়া হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য বড় ধরনের ছাড় ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। নতুন আদেশ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ভারতে প্রবেশ করা এসব ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই দেশটিতে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ফরেনার্স (এক্সেম্পশন) অর্ডার, ২০২৫ অনুযায়ী, নতুন অভিবাসন আইন ও বিদেশি নাগরিক আইনের আওতায় এই ছাড় দেওয়া হয়েছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই আদেশের ফলে যেসব ব্যক্তি বৈধ পাসপোর্ট বা ভ্রমণ নথি ছাড়া কিংবা মেয়াদোত্তীর্ণ নথিপত্র নিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন, তাদের আর শাস্তির মুখে পড়তে হবে না।
এ আদেশ বিশেষ করে ২০১৪ সালের পর পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা সংখ্যালঘুদের জন্য স্বস্তির খবর হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকেও ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া অনেক সংখ্যালঘু এই সুবিধার আওতায় পড়বেন।
এছাড়া, নেপাল ও ভুটানের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও কিছু ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যদি চীন, ম্যাকাও, হংকং বা পাকিস্তান হয়ে ভারতে প্রবেশ বা প্রস্থান করেন, তাহলে তারা এই সুবিধা পাবেন না।
তিব্বতি শরণার্থীদের মধ্যে যারা ১৯৫৯ থেকে ২০০৩ সালের ৩০ মে’র মধ্যে কাঠমান্ডুর ভারতীয় দূতাবাস থেকে বিশেষ প্রবেশ অনুমতিপত্র সংগ্রহ করে ভারতে এসে নিবন্ধন করেছেন, তারাও একই সুবিধা পাবেন বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে যেসব ব্যক্তি এই আইনের আওতায় পড়েন না, তাদের ক্ষেত্রে শাস্তির বিধান বহাল থাকবে। ভারতের ইমিগ্রেশন অ্যাক্টের ২১ নম্বর ধারা অনুযায়ী, বৈধ পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া দেশে প্রবেশ করলে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ৫ লাখ রুপি জরিমানা হতে পারে। আবার ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ভারতে অবস্থান করলে সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা ৩ লাখ রুপি জরিমানা হতে পারে।
এছাড়া আদেশে বলা হয়েছে, বিদেশি কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই ভারতে ভ্রমণ করতে পারবেন। একই সঙ্গে যেসব দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালনের জন্য পরিবারসহ ভারতে যাতায়াত করেন, তাদের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৯ সালে পাস হওয়া নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করা ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছিলেন। নতুন আদেশে সেই সময়সীমা এক দশক বাড়িয়ে ২০২৪ সাল পর্যন্ত করা হলো।