যুক্তরাজ্যে নানা শ্রেণিগোত্রের মধ্যে শিক্ষাগত বৈষম্য থাকলেও, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়ে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সম্প্রতি ন্যাশনাল বিহেভিয়ার সার্ভে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের শ্বেতাঙ্গ নিম্নবিত্ত শিক্ষার্থীরা স্কুল থেকে বহিষ্কার ও অনুপস্থিতির হারে এগিয়ে থাকলেও, দক্ষিণ এশীয় মুসলিম পরিবারভিত্তিক শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা, তুলনামূলকভাবে এগিয়ে রয়েছে শিক্ষাগত অর্জনে।
পরিসংখ্যান বলছে…
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে, দরিদ্র শ্বেতাঙ্গ পরিবারের প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছে। অন্যদিকে, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৪৭ শতাংশ ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ইংরেজি ও গণিতে জিসিএসই গ্রেড ৫ বা তদূর্ধ্ব অর্জন করেছে, যা জাতীয় গড় ৪২ শতাংশ এবং শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের গড় ৪০ শতাংশের চেয়েও বেশি।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হারেও ব্রিটিশ-বাংলাদেশিরা এগিয়ে, যা ভবিষ্যতের পেশাগত ও সামাজিক সাফল্যের বড় সূচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সাফল্যের পেছনে পারিবারিক মানসিকতা
বিশেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ এশীয় মুসলিম পরিবারগুলো শিক্ষাকে শুধুমাত্র চাকরি পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে নয়, বরং জীবনমান উন্নয়ন ও পারিবারিক সম্মান রক্ষার একটি পথ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
‘জয়েন্ট কাউন্সিল ফর কোয়ালিফিকেশনস’ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ-লেভেলে শ্বেতাঙ্গ সহপাঠীদের তুলনায় বেশি এ এবং এ প্লাস গ্রেড অর্জন করেছে।
বৃহত্তর দক্ষিণ এশীয়দের সাফল্য
শুধু বাংলাদেশিরা নয়, ব্রিটিশ-ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৬২ শতাংশ ইংরেজি ও গণিতে গ্রেড ৫ বা তার বেশি পেয়েছে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির হারও সবচেয়ে বেশি।
শিক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য
শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসন বলেন,
“যারা নিয়মিত স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, তারা ২৮ বছর বয়সে বছরে গড়ে ১০ হাজার পাউন্ড কম উপার্জন করে। এটি শুধু ব্যক্তির নয়, গোটা সমাজের ক্ষতি।”
শিক্ষাবিদদের মত
ব্রিটিশ বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ ড. রেনু লুৎফা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,
“বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থীরা এখন ব্রিটেনে শিক্ষাক্ষেত্রে ঈর্ষণীয় মেধার দ্যুতি ছড়াচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে পরিবারগুলোর সচেতনতা ও শিক্ষার্থীদের নিজেদের আত্মপ্রত্যয়।”
এই প্রবণতা প্রমাণ করে, অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষায় সফল হওয়া সম্ভব— যদি থাকে পরিবার, সমাজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত চেষ্টার দৃঢ়তা।