ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ শুরু করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার ‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ নামের একটি চুক্তির আওতায় এই প্রক্রিয়া চালু করেছে।
এই চুক্তির আওতায় বুধবার থেকে আটক অভিবাসীদের ইমিগ্রেশন রিমুভাল সেন্টারে রাখা হচ্ছে। তিন দিনের মধ্যে ফ্রান্সে প্রত্যাবাসনের আবেদন পাঠানো হবে এবং আশা করা হচ্ছে, ১৪ দিনের মধ্যেই ফ্রান্সের সাড়া পাওয়া যাবে। সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহের মধ্যেই তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে অবৈধভাবে প্রবেশ করা অভিবাসীদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাকে ফ্রান্সে পাঠানো হবে এবং তার বিনিময়ে যুক্তরাজ্য সমপরিমাণ ফরাসি আশ্রয়প্রার্থী গ্রহণ করবে। তবে চুক্তির কিছু অস্পষ্টতা ও আইনি সীমাবদ্ধতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিবাসন আইন বিশেষজ্ঞরা।
এই চুক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—যারা যুক্তরাজ্যে পারিবারিক বা মানবিক ভিত্তিতে প্রবেশের যোগ্যতা রাখেন, তাদের জন্য একটি আইনি প্রবেশপথ চালু করা হয়েছে। তবে এ জন্য আবেদনকারীদের পাসপোর্ট, ছবি এবং প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দিয়ে নিরাপত্তা যাচাই ও বায়োমেট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
হোম অফিস জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ৫০ জন অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। এটি একটি পরীক্ষামূলক ধাপ, যা সফল হলে ভবিষ্যতে আরও বিস্তৃত পরিসরে কার্যকর করা হবে। পাশাপাশি অবৈধভাবে যুক্তরাজ্যে প্রবেশের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করতে একটি প্রচারাভিযান চালানো হবে।
হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেন, “সীমান্তে সক্রিয় অপরাধী চক্রগুলো ভেঙে দিতে সময় লাগবে, তবে এই উদ্যোগ একটি বড় পদক্ষেপ। আমরা প্রথমবারের মতো অভিবাসীদের সফলভাবে ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছি।”
মঙ্গলবার প্রকাশিত চুক্তির কপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেসব অভিবাসীর আশ্রয় আবেদন এখনো বিচারাধীন, তাদের ফেরত পাঠানো যাবে না। তাছাড়া, যদি ফ্রান্স মনে করে কোনো ব্যক্তি নিরাপত্তার জন্য হুমকি, তাহলে সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করার অধিকার থাকবে।
চলতি বছরে (২০২৫) এখন পর্যন্ত ২৫,০০০-এর বেশি মানুষ ছোট নৌকায় করে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে, যা একটি নতুন রেকর্ড। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি। সরকার এই চুক্তিকে অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় একটি ‘গেমচেঞ্জার’ হিসেবে বিবেচনা করছে।