শীতের আগমন শুরু হতে না হতেই যশোরের প্রত্যন্ত এলাকায় খেজুরের রস সংগ্রহে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এ সব গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে ছয় মাস সংসার চলবে। আগামী ৫ মাসে লক্ষাধিক টাকা বাড়তি আয় হবে বলে আশা গাছিদের।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলায় গাছির সংখ্যা কম হওয়ায় অধিকাংশ খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
আর কৃষি বিভাগ বলছে, প্রতিবছর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন গাছি তৈরি করছে তারা। এর ফলে রস আহরণ ও গুড় তৈরির পরিমাণ বাড়বে।
জানা যায়, খেজুরের রস আহরণের মধ্য দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হয় শীতের আমেজ। সে হিসেবে যশোরাঞ্চলে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের পূর্ব প্রস্তুতি শীত আসার জানান দিচ্ছে। প্রস্তুতি হিসাবে খেজুর গাছের আগায় বিশেষ পদ্ধতিতে চলছে কাটাকুটির কাজ।
গাছিরা জানান, প্রথমে ধারালো দা দিয়ে খেজুর গাছের মাথার সোনালি অংশ বের করছেন তারা। এর ৮ থেকে ১৪ দিন পর নোলন স্থাপন করা হবে। এর সপ্তাহখানেক পর শুরু হবে সুস্বাদু খেজুর রস আহরণের কাজ। গাছ তৈরির এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এখন ব্যস্ত সময় যাচ্ছে তাদের।
তাদের দাবি, গাছির সংখ্যা কম হওয়ায় অধিকাংশ খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা সম্ভব হবে না। বর্তমান প্রজন্ম কৃষি কাজে আগ্রহী না হওয়ায় কমছে গাছির সংখ্যা। তারপরও আগামী চার মাস খেজুরের রস ও গুড় বিক্রির অর্থে চলবে তাদের সংসার।
যশোর সদর উপজেলার তালবাড়িয়া গ্রামের গাছি হাসান আলী বলেন, ‘সাধারণত শীতকালের কার্তিক মাসে রস সংগ্রহের জন্য গাছগুলো প্রস্তুত করতে হয়। একটা গাছের ডাল-পালা কেটে প্রস্তুত করতে কয়েকদিন সময় লাগে। গাছির অভাবে বাইরে থেকে লোক এনে প্রাথমিক কাজ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। এরপর রস আহরণের কাজ নিজই করবো।’
একই গ্রামের রমজান আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রামে অন্তত দশ হাজার খেজুরের গাছ রয়েছে। গাছি আমরা তিনজন। এই তিনজন মিলে এক হাজারের মত গাছ কাটতে পারবো। বাকি গাছ পড়ে থাকবে। কিছু মানুষ বাইরের জেলা থেকে লোক এনে গাছ প্রস্তুতির কাজ করছেন। গাছির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে খেজুরের রস ও গুড় উৎপাদন করে বেশ লাভবান হওয়া যেত।’
সজন তরফদার নামে অপর একজন জানান, বর্তমান প্রজন্ম খেজুরের রস আহরণ করার বিষয়টি আয়ত্ত করতে চান না। তারা সবাই শহরমুখী, পড়াশুনা চাকরি-বাকরি নিয়ে ব্যস্ত। ফলে শীত মৌসুমে নিজেদের খাওয়ার জন্য রস পাওয়া যায় না। অথচ এক সময় আমাদের গ্রাম থেকে এক একটি পরিবার প্রতি হাটে এক ভ্যান করে গুড় বিক্রির জন্য নিয়ে যেত। সরকার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে গাছি তৈরি করতো তাহলে খেজুরের রস ও গুড় গ্রামীণ অর্থনীতির চাকাকে শক্তিশালী করতো।
খাজুরা এলাকার গাছি হায়দার আলী জানান, পুরো মৌসুম জুড়ে ব্যস্ত সময় কাটাবেন তারা। এ বছর ২০০ গাছ প্রস্তুত করছেন তিনি। এসব গাছের রস ও গুড় বিক্রি করে ছয় মাস সংসার চলবে। আশা করছেন এই ৫ মাসে লক্ষাধিক টাকা বাড়তি আয় হবে তার।’
এ দিকে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) প্রতাপ মণ্ডল বলেন, ‘যশোরের খেজুর রস ও গুড়ের সুনাম ধরে রাখতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। কৃষকদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি প্রতিবছর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন নতুন গাছি তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৪ শতাধিক গাছিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। চলতি মৌসুমেও ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পাশাপাশি নতুন করে খেজুরের বীজ বপন করা হচ্ছে। এর ফলে রস আহরণ ও গুড় তৈরির পরিমাণ বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরে ১৭ লাখ ২৩ হাজার ৪৮০টি খেজুর গাছ রয়েছে। যারমধ্যে রস আহরণযোগ্য গাছের পরিমাণ চার লাখ দুই হাজার ৪৩৫টি। এর মধ্যে তিন লাখ ৪ হাজার ৫টি গাছ থেকে ৫ হাজার ১২৫ জন গাছি রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির কাজ করবেন।