“বাংলাদেশের জনগণ অনেক সময় টাকার বিনিময়ে ভোট দেয়”—এমন মন্তব্য করে দেশের বিদ্যমান নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লন্ডনের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউজে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র, রাজনৈতিক সংস্কার ও নতুন রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা তুলে ধরেন।
ড. ইউনূস বলেন, “এই নির্বাচন শুধু একটি সরকার গঠনের জন্য নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরির জন্য।” তিনি মনে করেন, দেশের জনগণ একটি রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে এবং এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি আদর্শিক ও নৈতিক ভিত্তির ওপর রাষ্ট্র গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা একটি উত্তেজনাকর সময় পার করছি। এই উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা চাই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে। আমাদের লক্ষ্য শুধু নিয়মিত ভোট নয়, বরং ভোটের মাধ্যমে একটি নতুন আদর্শিক রাষ্ট্র নির্মাণ।”
ড. ইউনূস স্মরণ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার সময় তিনি ও তার সহকর্মীরা রক্ত দেওয়া তরুণদের স্বপ্নের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই দেশের প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সংস্কারের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা আর সেই পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফিরতে চাই না, যেগুলো সমস্যার জন্ম দিয়েছে।”
এই উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন, সংসদ, সংবিধান, সিভিল সার্ভিসসহ বিভিন্ন খাতে একাধিক সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা ইতিমধ্যে তাদের পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ জমা দিয়েছে। এসব সুপারিশ দেশের প্রশাসনিক কাঠামোয় আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।
সুপরিকল্পিত সংস্কার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত হয়েছে ‘ঐক্যমত্য গঠন কমিশন’। এই কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্র করে একটি সর্বজনস্বীকৃত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে কাজ করছে। তবে, ইউনূস নিজেই স্বীকার করেন—বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐকমত্য তৈরি করা সহজ নয়।
তিনি বলেন, “অনেকে বলবেন, ‘ভোটারদের উপর আস্থা রাখুন।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে ভোটদান প্রক্রিয়া কখনও কখনও অর্থের বিনিময়ে বিকৃত হয়। আমরা সেই দুর্বলতাকে স্বীকার করছি এবং চাই একটি বিশ্বাসযোগ্য, কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী ব্যবস্থা।”
চ্যাথাম হাউজে দেওয়া বক্তব্যে ড. ইউনূস একটি ভবিষ্যতমুখী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং নৈতিক গণতন্ত্রের স্বপ্ন তুলে ধরেন। তাঁর এই বক্তব্য দেশে এবং প্রবাসে আলোচনার ঝড় তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা হতে পারে।