বাংলার ‘আমাজান’ রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট
রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০ হাজার ৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। আষাঢ় শ্রাবণ এই দুই মাস এই বন থাকে ৩০ ফুট পানির নিচে ডুবে। এছাড়া সারাবছর সাধারণত ১০ ফুটের মতো পানি দেখা যায় এই অরণ্যে। এছাড়া এই অরণ্যের আরেকটি বিশেষত্ব দিক হলো এইখানে জন্মায় করচ গাছ।
রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। রাতারগুল পানির নিচে তলিয়ে থাকা অবস্থায় বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়।
অনেক পর্যটক রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’ হিসাবে অভিহিত করেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি, আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়া শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
এই বন মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও পরবর্তিতে বাংলাদেশ বন বিভাগ, বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের জলসহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে। এছাড়া জলমগ্ন এই বনে রয়েছে হিজল, করচ আর বরুন গাছ আছে পিঠালি, অর্জুন, ছাতিয়ান, গুটিজাম, বটগাছও। আছে বট গাছ। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।
সারা পৃথিবীতে ফ্রেশওয়াটার সোয়াম্প ফরেস্ট বা স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। ভারতীয় উপমহাদেশ আছে এর দুইটি…… একটা শ্রীলংকায় আর আরেকটা আমাদের সিলেটের গোয়াইনঘাটে।
কিভাবে যাবেন…
আপনি যদি সিলেট থেকে যেতে চান তাহলে আপনাকে চলে আসতে হবে সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্ট। আম্বরখানা থেকে আপনি খুব সহজেই সিএনজিতে করে চলে যাবেন গোয়াইনঘাটে। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ১০০-১২০ জন প্রতি, যদি আপনি সিএনজি রিজার্ভ করে যেতে চান তাহলে ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। আপনি চাইলে মাইক্রো ভাড়া করেও চলে যেতে পারেন, সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ৩০০০-৩৫০০ টাকা।
আপনি যদি সিলেটের বাইরে থেকে আসতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে আগে সিলেট শহরে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি ঠিক করে নিবেন আপনি কিভাবে সিলেটে আসতে চান। কারণ আপনি চাইলে বাস, ট্রেন কিংবা প্লেনে করেও সিলেটে আসতে পারেন। তারপর একিভাবে চলে আসবেন সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্টে। উপরে আমি বলে দিয়েছি কিভাবে আপনি যাবেন রাতারগুল।
থাকবেন কোথায় খাবেন কিভাবে…
খাওয়া দাওয়া করার জন্যে খুব ভালো মানের হোটেল আপনি সেখানে পাবেন না। সেক্ষেত্রে যাওয়ার পথে সিলেট শহর থেকেই খাবার নিয়ে গেলে ভালো। আর থাকার জন্যে আমি অবশ্যই বলবো ভালো মানের হোটেল সেখানে পাবেন না, সেক্ষেত্রে সিলেট শহরেই যেকোন ভালো মানের হোটেল আপনাকে বাছাই করে নিতে হবে।