সুনামগঞ্জে বাঁধ ভেঙ্গে ডুবেছে আরও দুই হাওর
বোরো ধানের ভান্ডার হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জের প্রতিটি হাওরেই পুরোদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এরইমধ্যে রোববার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরের বাঁধ ভেঙে গলগলিয়া হাওরের প্রায় ৩০০ হেক্টর ও রাতে দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওরের বাঁধ ভেঙে আরও ৩০০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগের দাবি দুটি হাওরে ৪০০ হেক্টর জমি তলিয়েছে।
এদিকে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ৫.৯৪ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এছাড়াও বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে ফসলরক্ষা বাঁধ। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দিরাইয়ে হুরামন্দিরা হাওরে ১০০০ হেক্টর জমি রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০০ হেক্টরের বোরো ধান কেটেছেন কৃষক। সন্ধ্যায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ৩০০ হেক্টর জমির ধান পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, হাওরে জমির পরিমাণ আরও বেশি। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য সঠিক নয়। বাঁধ ভাঙার ফলে ৩০০ হেক্টরের বেশি জমি তলিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন তারা।
এদিকে বাঁধ ভাঙার ভয়ে পাকা ও আধাপাকা ধান কাটছেন কৃষকরা। হাওরের পাকাধান দ্রুত কেটে ফেলতে কৃষকদের অনুরোধ জানিয়েছে প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, দিরাইয়ে হুরামন্দিরা হাওরে ১০০০ হেক্টর জমি রয়েছে। রোববার পর্যন্ত হাওরের ৭০ ভাগ ধান কেটেছেন কৃষক।
দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওরের কৃষক হোসেন মিয়া জানান, ঋণ করে হাওরে বোরো ধানের ফসল করেছিলাম, ধানও খুব ভালো হয়েছিল। কিন্তু রোববার রাতে বাঁধ ভেঙে সকল ধান তলিয়ে গেছে। এখন আমি ঋণ শোধ করবো কি করে। আর সংসার চালাবো কী করে?
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জেলায় দুই লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এরমধ্যে ছয়টি উপজেলার ১৭টি হাওরের সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে গেছে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৫১ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। কৃষকদের পাশাপাশি ৫২৫টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে হাওরে ধান কাটা হচ্ছে। ৎ
এদিকে রোববার বিকেল ৪টার দিকে তাহিরপুরে টাঙ্গুয়ার হাওরের ২৭নং পিআইসি ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙে বর্ধিত গুরমা হাওরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে ওই হাওরের প্রায় ৬০ হেক্টর ফসলি জমি ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর আগে সকাল ৮টায় ওয়াচ টাওয়ার-সংলগ্ন বাঁধের ওপর দিয়েও গুরমা হাওরে পানি প্রবেশ শুরু করে।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সবকটি বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আজ রাতে ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতে পাহারা দেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।