সিলেটে ক্ষত রেখে নামছে বন্যার পানি
টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি সিলেট নগরের লাখ লাখ মানুষ। এসময়ে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িসহ আশ্রয়কেন্দ্রেগুলোতে। বন্যার পানিতে অনেকে হারিয়েছেন গৃহস্থালির মূল্যবান আসবাবপত্র। এছাড়াও টানা সাতদিন বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন থাকায় নগরবাসীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত শুক্রবার দুপুরের পর থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি দ্রুত নামতে শুরু করলেও বন্যার ক্ষত সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে আশঙ্কা দুর্গত নগরবাসীর। তবে পানি নামতে শুরু করায় এরইমধ্যে অনেকেই ফিরতে শুরু করেছেন বাসাবাড়িতে।
বন্যাদুর্গত এলাকার কয়েকজন জানান, গতকাল রাত থেকেই বিভিন্ন এলাকার পানি কমতে শুরু করেছে। কোথাও এক ফুট কোথাও আবার দুই ফুট পর্যন্ত পানি কমেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় পানির স্তর পরিমাপে দেখা গেছে গত ২৪ ঘণ্টার তুলনায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমার সিলেট সদর পয়েন্টে দশমিক ১৮ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। এখনো তা বিপদসীমার ১১ দশমিক ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টায় যা ছিলো বিপদসীমার ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার। এছাড়াও কানাইঘাট (সিলেট) পয়েন্টে বানের পানি দশমিক ২৩ সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপদসীমার ১৩ দশমিক ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেটের শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আনিসুর রহমান বলেন, শাহজালাল উপশহর এলাকা এখনো পানিবন্দি। বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন এলাকাটিতে দু-একটি চুরির খবর পেয়েছি। তবে কেউই থানায় এসে অভিযোগ দেননি। এরপরও উপশহর পুলিশ ফাঁড়িকে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সব ধরনের অপরাধ দমনে বন্যায়ও তৎপর।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করলেও বন্যার কারণে পানিবাহিত নানা অসুখে পড়েছেন অনেকে। নগরের ১২টি ওয়ার্ড পানিতে তলিয়ে ডায়রিয়া, চর্মরোগ, জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ভুগছেন লোকজন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শিশুরা।
বন্যার পানিতে সিলেট নগরের মেন্দিবাগ এলাকায় অবস্থিত সিটি করপোরেশনের পানি বিশুদ্ধকরণ (ওয়াটার ট্রিটমেন্ট) প্ল্যান্টটি তলিয়ে যায়। এতে প্ল্যান্ট থেকে বন্ধ হয়ে যায় পানি সরবরাহ। পাশাপাশি চারটি পাম্প তলিয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহ স্বাভাকি হচ্ছে না। এ অবস্থায় নগরের কিছু এলাকার পানিবন্দি মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন।
নগরের কলাপাড়া এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিনের বাড়ির টিউবওয়েলটি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। রমিজ জানান, খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রেখেছিলেন। সেগুলো কাপড়ে ছেঁকে পাত্রে রাখছেন। এরপর সেই পানি ফিটকিরি দিয়ে বিশুদ্ধ করে পান করবেন।
রমিজ উদ্দিনের মতো ভোগান্তিতে নগরের ঘাসিটুলা, শাহজালাল উপশহর, তেররতন, শিবগঞ্জ, কলাপাড়া, সোনাপাড়া, মেন্দিবাগ, মাছিমপুর, ছড়ার পার, চালিবন্দর কানিশাইল, মণিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
এদিকে লন্ডন সফর শেষে গত বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটে পৌঁছান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ সময় তিনি বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে কয়েকটি এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে খিচুড়ি ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন।