কাকও গণতন্ত্র চর্চা করে, বলছে গবেষণা
শুধু মানুষই নয়। নিজ সম্প্রদায়ের অন্যের মতের গুরুত্ব দেয় কাকও। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য যে, অন্যের মতের গুরুত্ব দিতে গিয়ে কাকও মানুষের মতো গণতন্ত্র চর্চা করে। তাদের জীবন চলার পথের অনেক সিদ্ধান্ত অন্যের ওপর চাপিয়ে না দিয়ে নিজেরা মিটিং করে। অন্যের মত নেয়। তারপর সিদ্ধান্ত নেয়। এ রীতিকে আমরা সভ্য মানুষরা বলে থাকি গণতন্ত্র। কিন্তু যে কাকের ভাষা আমরা বুঝি না, তাদের মধ্যেও এই রীতি প্রচলিত। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে, অনুকূল পরিস্থিতিতে- যেকোনো অবস্থায় তারা সিদ্ধান্ত নেয় সম্মিলিতভাবে।
এ জন্য বসে তাদের ‘পার্লামেন্ট’। সেখানে মতামত দেয় সবাই। তারপর সিদ্ধান্ত। এসব কথা উঠে এসেছে বৃটেনের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার-এর এক গবেষণায়। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্নওয়ালে অবস্থিত এক্সেটারের পেনরিন ক্যাম্পাসের অ্যালেক্স দিবনাহ। ‘মাস্টার্স বাই রিসার্স’ নামের গবেষণার অংশ হিসেবে তার দল নজর রাখে বিপুল সংখ্যক কাকের ওপর। তারা দেখতে পান, শীতে শত শত এমনকি হাজার হাজার কাক তাদের আবাসস্থলের আশপাশে জড়ো হয়। সেখানে গাছের মগডালে, কোনো ভবনের ছাদে বা কোনো চূড়ায় ‘পার্লামেন্ট অধিবেশন’ বসায় তারা। নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে। তাদের গলার স্বর এ সময় একই রকম থাকে। যখন সবাই এক সুরে কথা বলে বোঝা যায়, তাদের মধ্যে ঐকমত্য হয়েছে। এর পরক্ষণেই তারা আকস্মিকভাবে উড়াল দেয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা ঝাঁক বেঁধে একসঙ্গে নতুন কোনো গন্তব্যে যাত্রা করে।
এসব সময়ে তাদের গলার স্বর পরীক্ষা করেছেন ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের গবেষক দল। কাকদের কণ্ঠস্বর রেকর্ড করেছেন। তারপর পরীক্ষা করে দেখেছেন কর্নওয়ালের বিভিন্ন স্থানের কাক দলবেঁধে অন্য কোথাও উড়ে যাওয়ার আগে কি ঘটনা ঘটে। দলবেঁধে তারা যখন কোনো এক স্থানে মিটিং বা অধিবেশন বসায় তখন তাদের মধ্যে ‘সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণের’ প্রমাণ পাওয়া গেছে ওই রেকর্ডিংয়ে।
অ্যালেক্স দিবনাহ বলেন, রাতের বেলা একত্রিত হওয়ার পর প্রতিটি কাকের ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকে। তারা কখন একটি স্থান ত্যাগ করবে, সে সম্পর্কে একজনের সঙ্গে অন্যজনের মতের অনেক সময় মিল পাওয়া যায় না। কারণ, তাদের আকার আকৃতি, ক্ষুধা, খাদ্য পাওয়া, প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকা নিয়ে মতবিরোধও দেখা দেয়। এ অবস্থায় সম্প্রদায়কে টিকে থাকার জন্য তাদেরকে একমতে আসতে হয়। কারণ, কোনো স্থান একসঙ্গে ছেড়ে যাওয়া নানাদিক দিয়ে তাদের জন্য মঙ্গলময়।
এই গবেষণা টিমে আছে ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ, বার্সেলেনার সেন্টার ফর ইকোলজিক্যাল রিসার্স অ্যান্ড ফরেস্ট্রি এপ্লিকেশনও। তারা বলেছেন, আমাদের গবেষণা এটাই দেখিয়ে দিয়েছে যে, কাকদের মধ্যে যখন আলোচনা শেষ হয় তখন তারা প্রস্তাবের ওপর কার্যকর ‘ভোট দেয়’। এতে কোথাও ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যখন আহ্বানের পক্ষে যথেষ্ট ভোট পড়ে, তখনই তারা দলগতভাবে একটি স্থান ত্যাগ করে।
উল্লেখ্য, এই গবেষণায় অর্থ সহায়তা দিয়েছে হিউম্যান ফ্রন্টিয়ার সায়েন্স প্রোগ্রাম। এ বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে।