মিসক্যারেজ হওয়া শিশুর দেহাবশেষ রাখা হলো ফ্রিজে, কিন্তু কেন?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শিশু পরিপূর্ণ হয়ে ওঠার আগেই মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত হয়ে যাওয়া বিশ্বে খুব সাধারণ একটি ঘটনা হয়ে উঠেছে। প্রতি ১০০ জন গর্ভবতী নারীর মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাতের ঘটনা ঘটে।
ঠিক এমন একটি ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনের দম্পতি লরা ও লরেন্স এর জীবনে। কয়েক মাস আগে এই দম্পতির জীবনে ঘটে গেছে এক দূর্বিষহ ঘটনা। লরা যখন গর্ভবতী এবং পেটের বাচ্চার বয়স যখন চার মাস তখন লরার ব্লেডিং বা রক্তপাত হতে থাকলে এই দম্পতি লুইশামের ইউনিভার্সিটি হসপিটালে এ অ্যান্ড ই বিভাগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে যায়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তার জানায় তার গর্ভের সন্তান সুস্থ ও স্বাভাবিক আছে। কিন্তু এর চারদিন পর লরা ব্যাপক ব্যথা অনুভব করতে থাকলে আবারও ডাক্তারের কাছে যায়। এবার ডাক্তার জানায় তার পেটের বাচ্চা মারা গেছে।
এনএইচএস ট্রাস্টের এই হাসপাতালের চিকিৎসক গর্ভপাত ঘটাতে তাকে বাড়িতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। বাধ্য হয়ে লরা বাড়িতে চলে যায়। দুইদিন পর লরা ব্যাপক ব্যথা অনুভব করলে বাথরুমে চলে যায়। এসময় তার শরীর থেকে কিছু একটা বের হয়। এরপর সে লক্ষ্য করে এটি তার গর্ভের সন্তানের দেহাবশেষ। লরা ও লরেন্স জানান গর্ভে মারা যাওয়া তাদের এই শিশুটি একটি ছেলে শিশু ছিল।
লরা বলেন, ‘আমি ও আমার হাজবেন্ড মারাত্মক ট্রমায় ভুগতে থাকি। শিশুর দেহাবশেষ বাথরুম থেকে উদ্ধারের জন্য ৯৯৯ এ কল করলে সেখান থেকে জানানো হয় এটি জরুরি সেবার নাম্বার নয়। এরপর বাধ্য হয়ে একটি বক্সে মুড়িয়ে ট্যাক্সিতে করে শিশুর দেহাবশেষকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের এই ভ্রুণের ব্যাপারে কোনো সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি আমরা এটি কি করতে পারি সেটাও তারা জানায়নি। তারা শুধু বলতে থাকে ভ্রণের দেহাবশেষ নিয়ে তাদের কিছুই করার নেই। এটাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে হবে।’
লরার স্বামী লরেন্স বলেন, ‘এরপর আমরা হাসপাতালে গভীর রাত পর্যন্ত থেকেও কোনো সমাধান না পেয়ে সেখান থেকে শিশুর দেহাবশেষ সম্বলিত একটি টুপারওয়্যার বাক্স নিই। বাড়িতে এসে এটাকে কি করবো ভেবে কূলকিনারা করতে না পেরে ফ্রিজে কিছু জায়গা খালি করে সেখানে ভ্রণের বাক্সটি রেখে দেই।’ বিবিসিকে এভাবেই নিজেদের এমন বাজে অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করেছেন এই দম্পতি।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ডের ঘটনায় গ্রিনউইচ এবং লুইশাম এনএইচএস ট্রাস্ট ওই দম্পতির কাছে দুঃখপ্রকাশ করেছে। কয়েকমাস আগে এই ঘটনার তদন্ত করারও ঘোষণা দিয়েছে তারা। এদিকে এ ঘটনা যুক্তরাজ্যে গর্ভপাতের পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যথাযথ যত্ন ও চিকিৎসা করা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।