লোকসানের মুখে ব্রিটিশ হজযাত্রীরা
হজ পালনে মক্কায় যেতে চাওয়া ব্রিটিশ মুসলমানরা বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে আছেন। অনলাইনে হজ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করেছে সৌদি আরব সরকার। এতে যুক্তরাজ্যের হজযাত্রীদের কয়েক হাজার পাউন্ড লোকসান হতে পারে। খবর বিবিসির।
হজে যেতে আগ্রহের কথা জানিয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে ব্রিটিশ মুসলমানদের। পরে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে, কারা হজে যেতে পারবেন। কিন্তু ইতিমধ্যে অনেকেই হজ ট্যুর পরিচালনাকারী কোম্পানিতে নিবন্ধন করেছেন। সেখানে তাদের বড় অংকের অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এখন ওয়েবসাইটে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করায় তারা লোকসানে পড়বেন।
ইংল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বাস করা ফাহমিদা নামের এক নারী বলেন, হজে যেতে গেল দুবছর ধরে পরিবার নিয়ে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন। সম্প্রতি স্থানীয় হজ ট্যুর কোম্পানিতে নিবন্ধনও করেন। ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালন করতে পারবেন বলে তার মধ্যে উৎসাহ কাজ করছিল। কিন্তু অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে জেনে ফাহমিদা ও তার স্বামী হতাশ হয়ে পড়েন। নতুন ডিজিটাল নিবন্ধন ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ৩০ বছর বয়সী এই নারী।
তিনি বলেন, আমরা জানি না, কী ধরনের সুবিধা পাব। সৌদির সব ঐতিহাসিক স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারব কিনা; তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। আবার ভ্রমণে কী পরিমাণ খরচ হবে, তা জানা নেই। ভুল কিছু ঘটলে অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা; তাও অস্পষ্ট।
ডিজিটাল পোর্টালের মাধ্যমে স্বামীসহ নিজের নাম নিবন্ধন করেন ফাহমিদা। তিনি জানান, কয়েক সপ্তাহের জন্য তিনি সৌদিতে যেতে চান। কিন্তু কত সপ্তাহের জন্য তাকে প্রস্তুত হতে হবে, তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে নতুন ডিজিটাল ব্যবস্থা আগামী বছর পর্যন্ত স্থগিত রাখতে অনুরোধ জানিয়ে সৌদির হজ ও ওমরাহমন্ত্রী তাওফিক বিন ফাওজান আল-রাবিয়ার কাছে চিঠি লিখেছেন যুক্তরাজ্যের সর্বদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপের প্রধান ইয়াসমিন কুরাইশি।
বিভিন্ন হজ ট্যুর কোম্পানিকে যে অর্থ দেয়া হয়েছে, তা ফেরত দেয়া হবে কিনা; তাও জানতে চেয়েছেন তিনি। ইয়াসমিন কুরাইশি বলেন, ২০২০ সালে যেসব মুসলমান হজযাত্রা স্থগিত রেখেছিলেন, এবারও তারা যদি হজ পালন করতে না পারেন, তবে লোকসান হয়ে যাবে।
নতুন প্রকল্পে কীভাবে হজযাত্রীদের অর্থের সুরক্ষা দেয়া হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এবার যুক্তরাজ্যে কত সংখ্যক হজ ভিসা দেয়া হবে, তা জানা সম্ভব হয়নি। এর আগে প্রতি বছর ২৫ হাজার ব্রিটিশ মুসলমান হজে যেতে পারতেন।
নতুন ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় দুর্ভাবনায় পড়ে গেছেন ব্রিটিশ হজ ট্যুর কোম্পানিগুলোও। ম্যানচেস্টারভিত্তিক ট্রাভেল এজেন্ট মহসিন শাহ বলেন, সব হজযাত্রীকে এখন অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। তাদের মধ্যে কতজন ভ্রমণ ভিসা পাবেন, তা আমরা জানি না।
পাঁচ-তারকা প্যাকেজের জন্য তিনি সাড়ে ৯ হাজার পাউন্ড খরচ ধরেছেন। মক্কার বিভিন্ন হোটেল ও পরিবহন কোম্পানিকে সেই অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে। মহসিন শাহ বলেন, এতে আমাদের বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে। কারণ সামনে কী ঘটতে যাচ্ছে; তা আমরা জানি না। হোটেল ও পরিবহন ইতিমধ্যে বুকিং দেয়া হয়েছে। কাজেই আমরা এখন কীভাবে আয়োজন করব, নতুন ডিজিটাল ব্যবস্থার কারণে তা নিশ্চিত হতে পারছি না।