পদত্যাগ করছেন বরিস জনসন
নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিজ দলের মন্ত্রী এবং সদস্যদের বিদ্রোহের মুখোমুখি হওয়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করছেন। বৃহস্পতিবার আরও পরের দিকে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন বলে ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
বরিস জনসন তার রাজনৈতিক দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতা হিসেবে পদত্যাগ করবেন বলে বিবিসি জানালেও দেশটির আরেক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স বলছে, বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন জনসন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ কনজারভেটিভ নেতার পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেবেন বরিস জনসন। তবে আগামী শরৎকাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। এর ফলে চলতি গ্রীষ্মেই কনজারভেটিভ দলীয় নেতৃত্ব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং আগামী অক্টোবরে টরি পার্টির সম্মেলনের জন্য একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী জনসনের স্থলাভিষিক্ত হবেন।
এর আগে পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেন তিনি। বলেন, একজন প্রধানমন্ত্রীর কাজ হচ্ছে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা। তাই আমি পদত্যাগ করবো না। তাছাড়া আমার প্রতি বড় ম্যানডেট রয়েছে।
কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতা ডেভিড ড্যাভিস ৫৮ বছর বয়সী নেতা জনসনকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিজের স্বার্থের চেয়ে দেশকে আগে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
এর বিপরীতে জনসন বলেছিলেন, আমি এটা বিশ্বাস করি না যে, প্রধানমন্ত্রী পদে থাকলে সেটা জাতীয় স্বার্থের বিরোধী হবে। তবে আমি তার বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন বরিস ও তার সরকার। করোনা লকডাউন চলাকালে সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক মদের আসর বসিয়ে তিনি সমালোচনার জন্ম দেন। গত মাসে তার বিরুদ্ধে দলীয় আস্থাভোট আনা হলেও তাতে পার পেয়ে যান বরিস।
তবে দলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয় ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে ক্রিস পিনচারকে নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর। সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বরিস স্বীকার করেন, ক্রিস পিনচারের অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়টি তার জানা ছিল। তারপরও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকে ডেপুটি চিফ হুইপ করেন তিনি। এটি ছিল তার একটা ‘বাজে ভুল’। বরিসের এই স্বীকারোক্তি তাকে চাপে ফেলে দিয়েছে।
ব্রিটেনের অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাক, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের পদত্যাগের পর একই পথে হেঁটেছেন দেশটির শিশু ও পরিবারমন্ত্রী উইল কুইন্স এবং জুনিয়র পরিবহনমন্ত্রী লরা ট্রট। একের পর এক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ইতোমধ্যে ভাবমূর্তি সংকটের মুখে পড়া ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভবিষ্যৎকে আরও হুমকিতে ফেলেছে মন্ত্রীদের এই পদত্যাগ। একে একে তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করায় বরিসের গদি এখন টালমাটাল। এ অবস্থায়ও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
এ বছর পার্লামেন্ট সদস্যদের অনাস্থা ভোটে জয় লাভ করে বিরস জনসন যখন গা ঝাড়া দিয়ে আবার কাজ শুরু করার কথা বলছিলো তখন এমন ভাবে একে একে গুরুত্বপূর্ন মানুষেদর পদত্যাগের চাপ পরতে পারে বরিস জনসননের উপর।
এখন প্রশ্ন উঠেছে এমন টালমাটাল ব্রিটিশ রাজনীতিতে যদি হাওয়া বদল ঘটে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পদত্যাগ করতে বাধ্য হন অথবা তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে কে হবেন তার স্থলাভিষিক্ত? এ বিষয়ে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য নেতার নাম তুলে ধরেছে।
এই তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে সাবেক ফরেন সেক্রেটারি জেরিমি হান্ট, সাবেক স্বাস্থ্য সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ, পেনি মডার্ন্ট ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রতিরক্ষা সেক্রেটারী, সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক, পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান টম টুগেনহ্যান্ট, ফরেন সেক্রেটারী লিজ ট্রুস, নতুন চ্যাঞ্ছেলর নাদিম যাওয়াই। তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন সব থেকে বেশি এগিয়ে রয়েছে সাজিদ জাভিদ, ঋষি সুনাক ও জেরিমি হান্ট।