‘মূর্খ ভাঁড়’ বিদায় হয়েছে: জনসনের পদত্যাগে রাশিয়া
নানা বিতর্কের জেরে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রিত্বও। তবে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাগ্রহণের আগপর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান থাকছেন তিনিই। বরিস জনসনের এমন রাজনৈতিক পতনে আনন্দ প্রকাশ করেছে রাশিয়া। জনসনকে ‘মূর্খ ভাঁড়’ আখ্যা দিয়ে রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেনকে লড়তে অস্ত্র দেওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত সমুচিত পুরস্কারই পেয়েছেন তিনি। তার অসম্মানজনক বিদায় ঘটেছে। খবর রয়টার্সের।
১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে জনসন তাঁর পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তিনি (জনসন) আমাদের পছন্দ করতেন না, এমনকী আমরাও তাকে পছন্দ করতাম না।’
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পরপরই ইউক্রেনে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পাঠিয়েছিল বরিস জনসনের সরকার। জি৭ নেতাদের মধ্যেও জনসনই সবার আগে গত এপ্রিলে কিয়েভ সফর করেন। এসব কারণে ইউক্রেনীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তার পদত্যাগে নাখোশ জেলেনস্কি প্রশাসন।
বরিস জনসন পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই তার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমরা সবাই দুঃখ নিয়ে [জনসনের পদত্যাগের] খবরটি শুনেছি। শুধু আমি নই, গোটা ইউক্রেনীয় সমাজ আপনার প্রতি সহানুভূতিশীল। আমাদের সন্দেহ নেই যে, [ইউক্রেনের প্রতি] গ্রেট ব্রিটেনের সমর্থন সংরক্ষিত থাকবে, তবে আপনার (জনসন) ব্যক্তিগত নেতৃত্ব ও ক্যারিশমা এটিকে বিশেষ করে তুলেছিল।
ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে জনসন রাশিয়ার উপর যতটা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, মস্কোর ওপর এতটা কঠোরতা আধুনিক যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে দেখা যায়নি।
জনসন নিজের পদত্যাগ ঘোষণার ভাষণেও ইউক্রেনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেছেন, ‘স্বাধীনতার লড়াইয়ে যতদিন প্রয়োজন ততদিনই যুক্তরাজ্য আপনাদের সমর্থন দিয়ে যাবে।’
নানা কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই জনসনের আসন টলমল ছিল। তারপরও আশায় ছিলেন, ভেবেছিলেন শেষ পর্যন্ত সব সামলে উঠতে পারবেন। তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে না। সম্প্রতি নিজের সহকর্মীদের সে কথা তিনি বলেছিলেনও।
জনসন বলেছিলেন, তিনি মার্গারেট থ্যাচারের চেয়ে বেশি সময় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে চান। ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। যিনি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের চিরশত্রু বলে পরিচিত ছিলেন।
রাশিয়ার ধনকুবের ওলেগ ডেরিপাস্কা টেলিগ্রামে জনসনের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, একজন ‘মূর্খ ভাঁড়ের’ জন্য এ এক ‘অসম্মানজনক যবনিকাপাত’। যার বিবেক ‘ইউক্রেন যুদ্ধে বিনা কারণে লাখ লাখ মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে যাওয়ার জন্য’ একদিন জ্বলবে।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষের স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভলোদিন বলেন, ‘ভাঁড় চলে যাচ্ছে। ইউক্রেনীয়দের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাওয়ার প্রধান বুদ্ধিদাতাদের অন্যতম একজন হচ্ছেন তিনি (জনসন)। এ ধরনের নীতি কোথায় নিয়ে যায় তা নিয়ে ইউরোপের নেতাদের ভাবা উচিত।’