শ্রীলঙ্কার পরিণতির ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এবং নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা; যা দেশটিতে ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলন উসকে দিয়েছে। সাধারণ জনগণের আন্দোলনের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন লঙ্কান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশসহ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ।
সোমবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে শ্রীলঙ্কা সংকটের মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা কয়েকটি দেশের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গত শনিবার আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েবা বলেন, যেসব দেশের ঋণের পরিমাণ বেশি ও সীমিত পরিসরের নীতিমালা রয়েছে, তাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি হবে। শ্রীলঙ্কার সংকট এসব দেশের জন্য সতর্ক সংকেত।
বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জন্য খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো গুরুত্বপূর্ণ আমদানি করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। এর ফলে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে। এক বছর আগের তুলনায় খাদ্যের দাম ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য প্রধান বৈশ্বিক মুদ্রার বিপরীতে শ্রীলঙ্কার রুপির মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
অনেকেই দেশটির চলমান এই পরিস্থিতির জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসেকে দায়ী মনে করেন। তাদের মতে, রাজাপাকসের ভুল নীতির কারণে শ্রীলঙ্কায় বর্তমান সংকট তৈরি হয়েছে। আর এই সংকটের প্রভাব করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আরও প্রবল হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কা বিপুল পরিমাণ ঋণ করেছে। দুই দশকের মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রথম দেশ হিসেবে গত মাসে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়েছে। দেশটির কর্মকর্তারা ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেলআউটের জন্য আইএমএফের সাথে আলোচনা করছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে এই আলোচনা আপাতত থমকে গেছে।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধি, মুদ্রার অবমূল্যায়ন, উচ্চমাত্রার ঋণ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো একই ধরনের বৈশ্বিক প্রতিকূলতা এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অন্যতম প্রভাবশালী ঋণদাতা চীন। আর এসব দেশের ভাগ্যকে গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে দেশটি। তবে বেইজিংয়ের ঋণ দেওয়ার শর্তগুলো কী অথবা কীভাবে ঋণ পুনর্গঠন করতে পারে তা পরিষ্কার নয়।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের অ্যালান কিনানের মতে, এতে চীনের দায় রয়েছে। দেশটি ব্যয়বহুল অবকাঠামো প্রকল্পকে উৎসাহ দিয়েছে এবং সমর্থন করছে। আর এসব প্রকল্প থেকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক অর্জন আসছে না।
তিনি বলেন, ‘শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন রাজাপাকসে পরিবার এবং তার নীতির জন্য সক্রিয় রাজনৈতিক সমর্থন সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল… শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পতনের মূলে রয়েছে এই রাজনৈতিক ব্যর্থতা। দেশটি যতক্ষণ পর্যন্ত সাংবিধানিক পরিবর্তন এবং অধিক গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে অগ্রসর না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বর্তমান দুঃস্বপ্ন থেকে রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো অন্যান্য দেশও একই পথে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।