যে গ্রামে আত্মহত্যা করে হাজার হাজার পাখি
রহস্যময় এক গ্রাম। যেখানে গিয়ে হাজার হাজার পাখি আত্মহনন করে। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন? অদ্ভুত এই ঘটনা ঘটে ভারতের আসামের এক গ্রামে।
১৯০৫ সাল থেকে সেখানকার জাটিঙ্গা গ্রামে পাখিমৃত্যুর অস্বাভাকি ঘটনা সবার চোখে পড়ে। প্রথমদিকে এলাকাবাসী বিয়টিকে সাধারণ ভাবলেও দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা দেখা দেওয়াই সবাই সতর্ক হন।
এরপর ১৯১০ সালের এক গবেষণায় জানা যায়, শুধু সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেই পাখিমৃত্যুর হার বেশি। তবে পাখিদের আত্মহত্যার ঘটনা বিশ্বের সামনে আসে ১৯৫৭ সালে। ব্রিটিশ চা ব্যবসায়ী ওপক্ষীবিশারদ ই পি গি ঘটনাটি জানার পর জাটিঙ্গাতে ভ্রমণে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে একটি বই লেখেন।
১৯৫৭ সালে প্রকাশিত গি সাহেবের বই ‘দ্য ওয়াইল্ডলাইফ অব ইন্ডিয়া’। সেখান থেকেই বিশ্ব জানতে পারে জাটিঙ্গা রহস্যের কথা। আর তখন থেকেই এই পাখিদের রহস্যময় মৃত্যু দেখতে প্রতিবছরই আসামের জাটিঙ্গা গ্রামে ভিড় করেন পর্যটকরা। সেখানকার স্থানীয়রা মৃত পাখিদের মাংস খান।
এই গ্রামে পাখিদের আত্মহত্যা নিয়ে যেমন কুসংস্কার আছে ঠিক তেমনই এর বিপক্ষে আছে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, আকাশে থাকা দুষ্ট আত্মারাই বোধ হয় এই পাখিদের হত্যা করে।
তবে পাখিমৃত্যুর এই রহস্য খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা দেখেন, আত্মঘাতী পাখিদের মধ্যে স্থানীয় নানা প্রজাতির পাখি যেমন- বক, মাছরাঙা, কালি বক, রাজ বক ইত্যাদি আছে।
সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো পাখিরা শুধু বর্ষাকালেই আত্মহত্যা করে সেখানে। এর পেছনে বৈজ্ঞানিক কারণ সম্পর্কিত গবেষণা বলছে, বর্ষার শেষ দিকে আসামের অধিকাংশ জলাশয়ই পূর্ণ থাকে। যেদিকেই চোখ যায় শুধু পানি আর পানি।
আবার বর্ষায় বেশিরভাগ সময়ই আসামে বন্যা হয়। এই পরিস্থিতিতে পাখিরা নিজেদের বাসা হারায়। নতুন বাস খুঁজতে তারা পাড়ি দেয় অন্যত্র। আর যাওয়ার পথেই তারা আত্মহত্যা করে।
তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে অসমের ভয়ঙ্কর বন্যার সময় বিশাল সংখ্যক পাখি আত্মহত্যা করেছিল। যদিও পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে নাকি আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় না।
গবেষকরা জানান, দূর থেকে উড়ে আসতে আসতে নাকি জাটিঙ্গা গ্রামের আলো দেখে পাখিরা নামে। আর এই গ্রামে এসেই যেন হঠাৎ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে পাখির দল। অজানা দুঃখে প্রাণ ত্যাগ করে। অনেক সময় নাকি কুয়াশার কারণে এরা দিশেহারা হয়ে পড়ে।
তখন বড় বড় গাছ বা শক্ত কোনোকিছুতে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তখন গ্রামবাসীরা লাঠি দিয়ে পাখিদের পিটিয়ে মেরে ফেলে। শুধু এ গ্রামেই কেন এমন ঘটনা ঘটে সেই উত্তর খুঁজে পাননি কোনো বিজ্ঞানীই।