খুন করলেও কি আইনের ঊর্ধ্বে ব্রিটিশ রানি
যুক্তরাজ্য চালায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভা। এরপরও রাজপরিবার এখনও বহাল তবিয়তেই রয়েছে দেশটিতে। এখনও রানির নিরাপত্তার জন্য রয়েছে কুইন্স গার্ড। দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানও রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার নামেই যুক্তরাজ্যে জারি হয় রাষ্ট্রীয় আদেশ।
যুক্তরাজ্যে আইনের দৃষ্টিতে রানির অবস্থান সব কিছুর ঊর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে তিনি অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করেন। তাকে দেওয়ানি ও ফৌজদারি তদন্তের অধীনে বিচার করা যাবে না, এমনকি কোনো অপরাধেই তাকে আটক করা যাবে না।
গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রেও রানির কোনো ড্রাইভিং লাইসেন্স লাগে না। বাধা লাগে না সিটবেল্ট। ট্রাফিকের গতিসীমাও তাকে মানতে হবে না। যদি তিনি গতিসীমা লঙ্ঘনও করেন, পুলিশের কিছুই করার নেই। কারণ তার বিরুদ্ধে নেয়া যাবে না কোনো আইনানুগ পদক্ষেপ।
দেশের বাইরে ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ব্রিটিশ রানি এলিজাবেথের কোনো পাসপোর্টের প্রয়োজন হয় না। কারণ যুক্তরাজ্যে তার নামেই ইস্যু হয় পাসপোর্ট। তাই তার কোনো পাসপোর্টের প্রয়োজন নেই। রানিকে কোনো ধরনের ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয় না, এমনকি রাজপরিবারের কোনো আয়েও ট্যাক্স দিতে হয় না। তবে রানি অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার হয় না এমন সম্পদের ক্ষেত্রে তিনি নিজ ইচ্ছায় ট্যাক্স দেন। যদিও তা দিতে তিনি বাধ্য নন। কিন্তু যদি তিনি খুনের মতো অপরাধ করেন, তাহলে কী হবে?
ব্রিটিশ হেরিটেজ ট্রাভেল একটি প্রতিবেদন করেছে, যার শিরোনাম ছিল, ‘কী হবে যদি রানি কাউকে খুন করেন?’
যেকোনো খুনের বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব নেন একজন পুলিশ সদস্য। যুক্তরাজ্যে একজন কনস্টেবল হিসেবে দায়িত্ব নিতে গেলে রানির আনুগত্য ও সেবার শপথ নিতে হয়।
এমনকি আদালতের রায় পাঠ করা হয় রানির পক্ষ থেকে।
রানি আইন মানতে বাধ্য নন, কারণ তিনিই আইন। এমন পরিস্থিতিতে কোনো পুলিশের সাধ্য নেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা। তিনি শুধু পুলিশকে বলবেন, এখান থেকে চলে যাও। পুলিশকে চলে যেতে হবে। কোনো কোর্টের মুখোমুখিও তাকে হতে হবে না।
তবে পার্লামেন্ট একটি উদ্যোগ নিতে পারবে, একজন খুনি রানিকে রাজক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য বিল উত্থাপনের মাধ্যমে। তবে এখানেও সমস্যা রয়েছে, কারণ সেই বিল কার্যকর হতেও রানির অনুমোদন লাগবে।
এখন কথা হচ্ছে, রাজপরিবারের সবার ক্ষেত্রেই কী এমনটা প্রযোজ্য। এর উত্তর হল ‘না।’, তবে অবশ্য রানি চাইলে ভিন্ন কথা। কারণ রানির কথাই যুক্তরাজ্যে আইন।
সৌভাগ্যবশত যুক্তরাজ্যের মানুষের সেবার দিকেই রানির মনোযোগ। এমন কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে তার সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
রাজপরিবারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যদিও আইন মানতে বাধ্য নন রানি। এর পরও তার সব কার্যক্রম যাতে আইনের মধ্যে থাকে, তা নিশ্চিত করতে তিনি সতর্ক থাকেন।