আনারসের রাজধানী মধুপুর
টাঙ্গাইল জেলার একটি উপজেলা মধুপুর। আর এই মধুপুর উপজেলা আনারসের জন্য বাংলাদেশে বিখ্যাত। যাকে অনেকেই বলে থাকেন আনারসের রাজধানী। কেননা, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি আনারসের বাজার বসে মধুপুরে। মধুপুর উপজেলার বেশির ভাগ জমিতেই আনারসের আবাদ হয়। মধুপুর আর আনারস একটির সঙ্গে আরেকটি নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
মধুপুরের আনারসের বড় বাজার জলছত্র। উপজেলার অরণখোলা, আউশনাড়া, ষোলাকুড়ি বা পঁচিশ মাইল থেকে জলছত্রে আনারস আসে। কেউ বাইসাইকেলে ঝুলিয়ে নিয়ে আসেন, কেউ আনেন ঘোড়ার গাড়ি করে। পিকআপ-ইজিবাইক আর ভ্যানে করে তো আসেই। সড়কের দুই ধারে বসে বাজার। শুক্র ও মঙ্গলবার হাট বসে। কেনাবেচা অবশ্য প্রতিদিনই চলে। সারা দেশ থেকেই ক্রেতা আসেন।
পুরো মধুপুর জুড়েই আনারসের প্রচুর চাষ হয়। মধুপুরের অরুণখোলা, ষোলাকুঁড়ি, আউশনাড়া ইউনিয়নে আনারসের সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। এ এলাকায় চাষ হওয়া আনারসের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় আনারস হল জলডুগি। এছাড়া বর্তমান সময়ে জায়ান্টকিউ আনারস চাষেও ঝুঁকেছেন এ এলাকার চাষীরা। মধুপুরের এসব ইউনিয়নের যে কোনো গ্রামে গেলে দেখা যাবে বিস্তীর্ণ আনারসের ক্ষেত।
হাটজুড়ে রসাল আনারসের মৌ মৌ গন্ধ, আকর্ষণীয় বিভিন্ন সাইজের আনারস সবাইকে আকৃষ্ট করছে। সম্প্রতি দেশে তীব্র দাবদাহে মানুষ অনেকটাই হাঁপিয়ে উঠেছে। গরমে ঠাণ্ডা জ্বরসহ দেখা দিয়েছে নানা রকমের অসুখ-বিসুখ। গরমে জ্বর, ঠান্ডায় আনারসের কোনো বিকল্প নেই। তাই মধুপুরের আনারসের চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে প্রতিটি বড় সাইজের আনারস পাইকারি দরে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা, মাঝারি সাইজের ২০-২৫ টাকা ও ছোট সাইজের আনারস বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকা।
এদিকে চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক বেশি লাভের আশায় আনারসে ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যাবহার করে একসঙ্গে পাকিয়ে ফেলেছে। ফলে বাজারে আনারসের প্রচুর আমদানি হওয়ায় দাম কিছুটা কমে গেছে। এ ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।
আনারস আবাদের ইতিহাস
মধুপুরে আনারস আবাদের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। গড় (উঁচু) এলাকার আউশনারা ইউনিয়নের ভেরেনা সাংমা ষাটের দশকের শেষ দিকে গিয়েছিলেন ভারতের মেঘালয়ে। সেখানে প্রচুর আনারস হয়। তিনি কয়েকটি জায়ান্টকিউ জাতের আনারসের চারা নিয়ে আসেন। মধুপুর গড়ে নিয়ে এসে রোপণ করেন। প্রমবারেই ভালো ফলন হয়। খেতেও সুস্বাদু ছিল। পরে আরো বেশি জমিতে আনারস আবাদ করেন। তার দেখাদেখি অন্যরাও আনারসের আবাদ করতে থাকে।
একদিন দেখা গেল মধুপুরের সব দিকে আনারস। মূলত জায়ান্টকিউই আবাদ হতো, তবে গত কয়েক বছর জলডুগিও হচ্ছে। পাবর্ত্য অঞ্চলের আনারস জলডুগি। জায়ান্ট মানে দৈত্য। জায়ান্টকিউ আকারে সত্যিই বড়। জলডুগি খেতে মিষ্টি তবে আকারে ছোট।
জানা গেছে, মধুপুর জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদে মাঝেমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে অতিথি আসেন। হাঙ্গেরি, ডেনমার্ক বা আমেরিকা থেকে। তাদের আনারস খেতে দেওয়া হয়। আর বিদেশীরা আনারস খেয়ে প্রশংসাও করেন।
চাষীরা জানিয়েছেন, আষাঢ়-শ্রাবণে কারো বাড়িতে অতিথি এলে তাকে আপ্যায়ন করতে আনারস খেতে দেয় হয়। মৌসুমী ফলের মধ্যে এটি উল্লেখযোগ্য একটি রসালো ফল। এ মৌসুমে জামাই বাড়ি এলে তাকে যেমন আনারস খেতে দিতে হবে, আবার জামাই শ্বশুরবাড়ি গেলে তার সঙ্গেও আনারস থাকবে এটা অনেকটাই প্রচলিত হয়ে গেছে। আনারসের খ্যাতি ও খেতে সুস্বাদু হওয়ার কারণেই এটি হয়েছে।