রিজার্ভ নিয়ে কতটা সংকটে বাংলাদেশ, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপদজনক মাত্রায় চলে গেছে বলে মনে করছেন অনেক অর্থনীতিবিদ।
তারা বলছেন, এখন রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নীচে নেমে আসায় তা দিয়ে তিন মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়।
তবে সরকার এই পরিস্থিতিকে এখনও আশঙ্কাজনক মনে করছে না। যদিও রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিদ্যুতের লোডশেডিং করাসহ সাশ্রয়ী বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যাতে জ্বলানি আমদানির খরচ নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রায় দুই বছরের মধ্যে প্রথমবারের মত ৪০ বিলিয়ন বা চার হাজার কোটি ডলারের নীচে নেমে এসেছে।
এক বছর আগেই অর্থ্যাৎ গত বছরের জুলাই মাসেই সব রেকর্ড ভেঙে ৪৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ হয়েছিল।
রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলারের মজুদে চাপ বাড়ছিল।
সর্বশেষ কয়েকদিন আগে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় শোধ করতে হয়েছে এবং সেকারণে রিজার্ভ কমেছে।
বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং মালদ্বীপ-এই নয়টি দেশ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর সদস্য।এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যে সব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর এই আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া তথ্যে এখন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। এই পরিমাণ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পরিমাণ আরও কম। অন্যতম একজন অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ড: দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভের পরিমাণ যা বলা হচ্ছে, সেটাও দেশের অর্থনীতির জন্য বিপদ সংকেত।
“এমুহুর্তে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার যে মজুদ আছে, তা তিন মাসের আমদানি মূল্যেরও কম হয়ে যায়। নি:সন্দেহে অর্থনীতির জন্য এই পরিমাণ মজুদ একটা বিপদ সংকেত দেয়।”
কী পরিস্থিতি দাঁড়াতে পারে?
এখনই বিপদের ঝুঁকিতে পড়ছে, এমন কয়েকটি খাতও উল্লেখ করেন ড: ভট্টাচার্য।
তিনি মনে করেন, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে।
একইসাথে এটি টাকার বিনিময় মূল্যকেও দূর্বল করে দিচ্ছে। এর ফলে, অনেক ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি হবে।
ড: ভট্টাচার্য এটাও উল্লেখ করেন যে, এখনকার পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়ানো এবং প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর উৎসাহ বাড়াতে কিছুটা সুযোগ সৃষ্টি করবে।
কিন্তু তার ধারণা, সামগ্রিক বিচারে এটি নি:সন্দেহে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা দূর্বল করবে। এছাড়া বাংলাদেশে চলমান উন্নয়নের ধারাকেও শ্লথ করে দেয়ার আশঙ্কা থাকে।
ইতিমধ্যেই নানামুখী প্রভাব পড়ছে আমদানির ক্ষেত্রে।
সরকার বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করছে। তবে কয়েকমাস ধরে ডলার সঙ্কটের কারণে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতেও সমস্যায় পড়ছেন আমদানিকারকরা।
এমনকি বেসরকারি খাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি এবং সরকারিভাবে বিপিসির জ্বালানি তেল আমদানিতেও অনেক ব্যাংক ঋণপত্র বা এলসি খুলছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকগুলো ডলারের অস্থির বাজারের কথা বলছে।
বন্দরনগরী চট্টগ্রাম থেকে সেখানকার অন্যতম একজন আমদানিকারক ড: মুণাল মাহমুদ বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা কমবে না।
“আমদানি খাতে চাপ তৈরি হয়েছে এবং এর ফলে সবকিছুর দাম বাড়তি থাকবে।”
ড: মুণাল মাহমুদ তার অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “আগে আমদানির এলসি খুলতে সমস্যা হতো না। এখন অনেক পণ্য আমদানির শুল্ক শতভাগ করে দিয়ে এলসি নিরুৎসাহিত করছে।”
“ফলে শতভাগ শুল্ক দিয়ে কোন পণ্য আনা সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় পন্যের ব্যাপারেও এখন ব্যাংকগুলো এলসি খুলছে না,” বলেন তিনি।