বিক্ষোভে ২০০ ছাড়াল মৃত্যু, ইরানি শাসকরা কি পতনের মুখে?
পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে ইরানে। দিনে দিনে জোরাল হচ্ছে বিক্ষোভ। রাজধানী তেহরানসহ দেশের নানা অঞ্চলে প্রায় মাসব্যাপী আন্দোলনে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ অন্তত ২০০ জন। নারীদের নেতৃত্বে শুরু হওয়া এই আন্দোলনে একের পর এক পেশাজীবীরা যোগ দিচ্ছেন। ইরানের তেল শ্রমিকদের পর আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে সবশেষ বিক্ষোভে নেমেছেন দেশটির আইনজীবীরা।
এর আগে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ইরানের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুল শিক্ষার্থীরাও প্রতিবাদে যোগ দেন। নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক দমন-নিপীড়নের মুখেও রাজধানী তেহরানসহ দেশের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে বিক্ষোভ।
পুলিশি হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর সঙ্গে এক পুলিশ কর্মকর্তার হাতে বালুচ কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনা ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় অন্দোলন পরিণত হয়েছে সরকারবিরোধী বিক্ষোভে।
মাহসার মৃত্যুর পর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভে বুধবার ২৭ দিনে গড়িয়েছে।
অসলোভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইরান বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ২০১ জন। এর মধ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী আছে ২৩ জন।
আইএইচআরের তথ্য অনুযায়ী, সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের জাহেদান শহরে সবচেয়ে বেশি ৯৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
সিস্তান-বেলুচিস্তান প্রদেশের চাবাহার শহরের পুলশ প্রধানের হাতে এক কিশোরী ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে জাহেদানে ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার জুমার নামাজের পর শুরু হয় বিক্ষোভ। এতে নিরাপত্তা বাহিনী গুলি চালালে বহু মানুষ হতাহত হন। বেলুচ অ্যাক্টিভিস্ট ক্যাম্পেইন সেদিন নিহত ৪১ জনের নাম প্রকাশ করে। তবে পরে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৩-তে পৌঁছায় বলে জানিয়েছে আইএইচআর।
জাহেদানে বিক্ষোভের সময় সিস্তান-বেলুচিস্তানে ইসলামী বিপ্লবি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) গোয়েন্দা প্রধান আলী মুসাভিও গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
আইএইচআর বলছে, গত ২৭ দিনে ইরানের মোট ১৮টি প্রদেশে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে আহত অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। বাড়িতে গোপনে চিকিৎসা চলছে অনেকের।
এসব ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম। তিনি বলেন, ‘ইরানে, বিশেষ করে জাহেদানে বিক্ষোভকারীদের হত্যা একটি মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এটিসহ ইরানের সম্প্রতি অন্য অপরাধগুলোর তদন্ত করা।’