দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্তে তীব্র জটিলতা, মৃত্যুও বেশি
করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ যেন থামছেই না। উল্টো আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের হারও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্তদের ক্ষেত্রে তীব্র জটিলতা দেখা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে মৃতের হারও তুলনামূলক বেশি। যদিও এর সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেই কোনো গবেষণা বা জরিপ।
অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে এই বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪০ হাজার ১০১ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩৬ হাজার ১৯৯ জন। একইসঙ্গে ডেঙ্গুতে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ১৫২ জন (২ নভেম্বর পর্যন্ত)।
বছরের শুরুতে ডেঙ্গু সংক্রমণ শুধু রাজধানী কেন্দ্রিক হলেও গত একমাসে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে সারা দেশেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বর্তমানে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন দুই হাজার ৩০৯ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি এক হাজার ২৭৫ জন।
বৃষ্টির পর প্রখর রোদে এডিস মশা বাড়ে বহুগুণ
ব্লাড ট্রান্স-ফিউশন বিশেষজ্ঞ এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুল হক বলেন, আমাদের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে ডেঙ্গুর সাইকেলে সমস্যা হয়। অর্থাৎ ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা হতে যেই সময়টা লাগে সেটা তাপমাত্রার ওপর অনেকটা নির্ভরশীল।
তিনি বলেন, দেখা গেল কোনো জায়গায় বৃষ্টির কারণে পানি জমেছে এবং সেখান কিছু মশা ডিম পেড়েছে। এক্ষেত্রে বিষয়টা যদি এরকম হয় যে খুব বেশি বৃষ্টি হলো আবার সঙ্গে সঙ্গে রোদ হলো, এতে দ্রুত সময়ে ডিম থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ মশা পরিণত হয়।
এই চিকিৎসক বলেন, দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই সে পূর্ণাঙ্গ জীবন পেয়ে যায়। কিন্তু আবার যদি কয়েক দিন টানা বৃষ্টি হয় এবং রোদ না থাকে, তাহলে ডেঙ্গু সংক্রমণ কমে আসবে। কারণ ওই সময়ে ডিমটা কোনো এক জায়গায় স্থায়ীভাবে থাকতে পারবে না। আর থাকলেও মশাটি খুব দ্রুত সময়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ পারবে না। তাহলে ডেঙ্গুর প্রকোপটা চলছে সেটা কিন্তু স্লো-ডাউন হয়ে যাবে। তাহলে রোগটি আমরা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারবো।
হাসপাতালে ভর্তি বেশি, মৃত্যুর হারও অনেক বেশি
ডা. আশরাফুল হক বলেন, ডেঙ্গুতে এখন হাসপাতালে ভর্তি অনেক বেশি হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য একটা বড় বার্ডেন। এখন নতুন করে যদি আবার একদিনের বৃষ্টি এবং পরে প্রখর রোদ ওঠে, তাহলে ডেঙ্গুর বিস্তার আরও অনেক বেড়ে যাবে। যদি টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হয়, তাহলে মশা যে জায়গাতেই ডিম পাড়ুক, সেটা কিন্তু স্থায়ীভাবে ওই জায়গায় আর থাকে না।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে এবার মৃত্যুহার অনেক বেশি। কারণ আমাদের তো সুনির্দিষ্ট কোনো ডাটাবেজ নেই। ২০১৯ সালে দেশে যখন সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়, তখন কারা আক্রান্ত হয়েছিল এবং বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের মধ্যে কত সংখ্যক মানুষ একই ধরনে আক্রান্ত হচ্ছে। বর্তমানে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা পূর্বেও আক্রান্ত হয়েছিল কি না, এমন কোনো ডাটাবেজ আমাদের নেই।
দ্বিতীয়বার আক্রান্তদের জটিলতা অনেক বেশি
বিশিষ্ট এই ব্লাড ট্রান্স-ফিউশন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, এখন যাদের ডেঙ্গু জ্বর হচ্ছে, তাদের অনেকেরই প্রথম দিন থেকেই জ্বরের মাত্রা ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি হয়ে যাচ্ছে। যাদেরই এই তাপমাত্রায় জ্বর আসছে, হিস্ট্রি শুনে আমরা জানতে পারছি, সে আগেও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল। মেডিকেলের ভাষায় যেটাকে আমরা বলি প্রিভিয়াসলি এক্সপোজড। আর যারা প্রথমবার আক্রান্ত হচ্ছে তাদের ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর তাপমাত্রা বাড়ছে। আর যারা দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হচ্ছে তাদের তাপমাত্রা প্রথম দিন থেকেই অনেক বেশি। এমনকি তারা এত পরিমাণ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে, যে কারণে দ্রুততম সময়ে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা লাগছে। এক কথায় তাদের সিবিআর কন্ডিশনটা বেশি হচ্ছে।