দুয়ারে দুর্ভিক্ষের দূত, কতটা প্রস্তুত বাংলাদেশ?
দীর্ঘ সময় ধরে যখন অর্থনৈতিক কার্যক্রম এর গতি অস্বাভাবিক ভাবে কমতে থাকে তখন সৃষ্টি হয় মন্দার। মন্দার পরিস্থিতি যদি টানা কয়েক বছর স্থায়ী হয় তাহলে সৃষ্টি হয় মহামন্দার। আর সেই মহামন্দার হাত ধরেই আসতে পারে দুর্ভিক্ষ বা খাদ্যসংকট। যা নিয়ে ইতোমধ্যেই আতঙ্ক প্রকাশ করেছে পুরো বিশ্ব।
২০১৯ এ করোনা, ২০২১ এ ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ ও ২০২২ এ জলবায়ুর ব্যাপক তারতম্য। আর ২০২৩ এ? ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করেছেন, ২০২৩ এর মহামন্দা এবং দুর্ভিক্ষ নিয়ে। ইতোমধ্যে সেই মন্দা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশেও। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক অনুষ্ঠানে মন্দার ব্যাপারে আগাম সতর্ক করেছেন। এছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আলোচনায়ও উঠে আসছে বিষয়টি। সম্ভাব্য এই সংকট বাংলাদেশে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা মোকাবেলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সেটা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে সরকারের নীতি-নির্ধারণী মহলে।
বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি ‘বিশ্বে কি মন্দা আসন্ন’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির তিন মূল চালিকাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের অর্থনীতি দ্রুত গতি হারাচ্ছে। ফলে আগামী বছরে সামান্য আঘাতেও মন্দা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেই প্রতিবেদনের পরই মূলত মন্দার বিষয়টি আলোচনায় আসে।
গত ৪ অক্টোবর দুর্গোৎসব উপলক্ষে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মন্দার বিষয়টি জোরালোভাবে আলোচনা করেন। সেখানে তিনি জানান, মহামারি করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে ২০২৩ সালে বিশ্বে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। এজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার পর যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অনেক দেশে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ২০২৩ সালে দুর্ভিক্ষের শঙ্কার কথা বললে জাতিসংঘে বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন। সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি এক ইঞ্চি জমিও যেন পড়ে না থাকে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
এরপর গত ৬ অক্টোবর বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী একটা আশঙ্কা, ২০২৩ সাল একটা মহাসংকটের বছর হবে। সেজন্য আগে থেকেই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার। যার যার জায়গা আছে, চাষ শুরু করে দেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য যেটুকু বিদ্যুৎ দরকার সেটুকু দিতে পারব। জনগণের কষ্ট যেন না হয়, সে দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষ যখন কষ্টে থাকে, তখন কি নিজেরা শান্তিতে থাকা যায়? উন্নত দেশের মানুষরা কষ্ট পাচ্ছে। আমার দেশের মানুষের যেন কষ্ট না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছি। কৃষি খাতে বাজেট ছাড়াও আলাদা বাজেট করেছি। আমার দেশের মানুষ যেন ভালো থাকে।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী বছর বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের জন্য বৈঠক করেছেন এবং পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রাখার ব্যবস্থা করেছেন।
গত ৭ অক্টোবর বিকেলে সিলেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, আগামী বছর (২০২৩ সাল) বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার যে সতর্ক বার্তা জাতিসংঘ দিয়েছে তাতে বাংলাদেশে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে এই মন্দার কারণে বাংলাদেশের খুব একটা ক্ষতি হবে না।
আবদুল মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিশিষ্টজনের সাথে আলাপ করেছেন। বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দেখে তারা বলেছেন, আগামী বছর সারা পৃথিবীর জন্য অর্থনৈতিকভাবে মন্দা হবে। তবে তাতে বাংলাদেশের খুব ক্ষতি হবে না।
মন্ত্রী বলেন, সংকট মোকাবেলায় দরকার খাদ্য। সরকার তা নিশ্চিতের চেষ্টা করছে। খাদ্যের ব্যবস্থা করতে পারলে বাকি সবকিছুর ব্যবস্থা করা যাবে।
এদিকে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সম্ভাব্য মন্দা ইস্যুতে বিস্তারিত বলেছেন। মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সচেতন মহল, বিশেষ করে অর্থনীতিবিদরা একটা মন্দার আশঙ্কা করছেন৷ মন্দা যখন উন্নত অর্থনীতিতে হবে, তখন আমরা যারা তাদের অধঃস্তন অর্থনীতি বলতে পারেন, কারণ আমরাও তাদের সঙ্গে বিশ্ববাজারের অংশ৷ আমরাও বিশ্ববাজারে বিক্রি করি, কিনি ইত্যাদি, ইত্যাদি৷ সুতরাং ওখানে মন্দা হলে আমাদের এখানেও হয়ে যাবে৷ এটা এড়ানোর কোনো পথ নেই৷