রাতেও কামড়াচ্ছে এডিস মশা
ডেঙ্গুতে দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে চলতি বছর। চলতি বছরের হিসাবে মঙ্গলবার পর্যন্ত এই জ্বরে মৃতের সংখ্যা ২১৩-এ পৌঁছেছে। গত ২২ বছরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এর আগে কোনো বছরেই ডেঙ্গুতে এত বেশি মানুষ মারা যাননি। ডেঙ্গুরোগের বাহক এডিস মশা। এ মশা কখন কামড়ায় এ নিয়ে অনেকেরই নানা মত আছে। তবে এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। তাই বলে এমন না যে, রাতে কামড়ায় না এ মশা! এডিস মশা কখন সক্রিয় থাকে তা নিয়ে প্রাণিবিজ্ঞানী ও কীটতত্ত্ববিদদের মধ্যে সামান্য মত-পার্থক্য আছে।
সবচেয়ে প্রচলিত তথ্য হচ্ছে, দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়ায়। ভোর বা সূর্য ওঠার ৩-৪ ঘণ্টা পর ও বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত এ মশা সক্রিয় থাকে। তবে প্রাণিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শুধু দিনেই নয়; এডিস মশা সক্রিয় থাকে উজ্জ্বল আলোতেও। তাই ঘর আলোকিত থাকলে রাতেও কামড়াতে পারে এডিস মশা।
এডিস মশা ভরদুপুরের চেয়ে আলো-আঁধারি পছন্দ করে বেশি। আর তাই ভোর বা সূর্যোদয়ের সময় কিংবা গোধূলি বা সূর্যাস্তের সময় এ মশা বেশি কামড়ায়। তবে রাতে কৃত্রিম আলো-আঁধারিতেও এডিস মশা কামড়াতে পারে।
প্রাণিবিজ্ঞানীরা মনে, এডিস মশার দুটি প্রজাতি আছে। একটি এলবোপিকটাস, আরেকটি এডিস ইজিপটাই। এডিস ইজিপটাই হচ্ছে ডেঙ্গুর প্রধান বাহক। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের প্রায় সব উষ্ঞ আদ্রীয় দেশের নগরেই এই মশা জন্মায়। নগরের বাড়ির আশপাশে, বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে এরা ডিম পাড়ে।
এডিস মশা চেনার উপায়
এই মশা অন্য মশাদের চেয়ে কালো ধরনের। এর পায়ে ও পাশে সাদা ডোরাকাটা থাকে। এডিস মশার মাথার পেছনে ওপরের দিকে কাস্তে ধরনের সাদা দাগ থাকে। বাকি মশাদের মাঝ বরাবর সাদা দাগ থাকে। এই দুটো দেখেই চিহ্নিত করা যায় এডিস মশাকে।
এ সময় ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে কী করবেন?
১. এডিস মশা স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে। এছাড়া মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
২. দিনের বেলা পায়ে মোজা পরুন।
৩. ফুল হাতার জামা পরুন।
৪. শিশুদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পরাতে হবে।
৫. দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।
৬. মশা যেন না কামড়াতে পারে এজন্য মশাবিরোধী বিভিন্ন ক্রিম বা তেল শরীরের খোলা স্থানে ব্যবহার করুন।
৭. দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।
৮. মশা তাড়াতে স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৯. ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, বাড়িঘরের আশপাশে যে কোনে পাত্রে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করুন।
১০. ঘরের বাথরুমে কোথাও পানি জমাবেন না।
১১. বাড়ির ছাদে বাগানের টবে বা পাত্রে যেন পানি জমে না থাকে। প্রয়োজনে প্রতিদিন পানি বদলে ফেলুন।
১২. বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার রাখুন।