আলোচনা, কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের বিজয়ের ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপন করলো লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব। ২৮ ডিসেম্বর রোববার সন্ধ্যায় লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে “বিজয়ের ৫৪ বছর : কোন পথে বাংলাদেশ”- শীর্ষক আলোচনায় বক্তারা একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং স্থিতিশীল, নিরাপদ বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন ।
প্রেস ক্লাব সভাপতি মুহাম্মদ জুবায়ের এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদের সঞ্চালনায় আলোচনা পর্বে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক মাসুদ হাসান খান ও যুক্তরাজ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ফেরদৌস রহমান।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্যারিস্টার তারেক চৌধুরী, ট্রেজারার সালেহ আহমদ, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শেখ মোজাম্মেল হোসেন কামাল ও সাংবাদিক এনাম চৌধুরী।
কবিতা আবৃত্তি করেন কবি সাংবাদিক সারওয়ার-ই-আলম ও কবি জিয়াউর রহমান সাকলাইন। ক্লাবের ইভেন্ট সেক্রেটারি রুপি আমিনের নেতৃত্বে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে।
সাংবাদিক মাসুদ হাসান খান বলেন, বাংলাদেশ এখন পুনর্গঠন এবং পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে । ২০২৪ সালের বিপ্লবের পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দিকে এগোচ্ছি । আমরা একটি উন্নত দেশ হওয়ার পথে রয়েছি । এর জন্য আমাদেরকে টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা এবং সমতা নিশ্চিত করতে হবে । ডিজিটালাইজেশন, নবায়নযোগ্য শক্তি এবং উদ্যোক্তা উন্নয়ন আমাদের ভবিষ্যতের চাবিকাঠি। সামগ্রিকভাবে, বাংলাদেশের রাজনীতি পুরনো দলীয় কাঠামো থেকে যুবক-নির্ভর, সংস্কারমুখী এবং সম্ভাব্য মেরুকৃত দিকে যাচ্ছে।
বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও শিক্ষক ফিরদৌস রহমান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে ৫৪ বছর আগের কিছু স্মৃতি তুলে ধরেন । তিনি সে সময়কার আন্দোলনের কয়েকটি ছবি প্রদর্শন করে বলেন, “এভাবেই আমরা লন্ডনের পথে পথে মিছিল করেছি । শাড়িপরা নারীদের মিছিলে ছিল বিপুল উপস্থিতি।”
তিনি জানান, ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে গিয়ে লবিং করা হয়েছে । এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হয়।
ফিরদৌস রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তি আসবে সুশাসনের মধ্য দিয়ে। তবে তা নিশ্চিত করতে হলে রাজনীতিতে আরও সততা আনতে হবে এবং দলীয় পর্যায়ে প্রকৃত গণতন্ত্র চর্চা করতে হবে। তিনি আরও প্রস্তাব দেন, বাংলাদেশের প্রতিটি এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে দেয়াল নির্মাণ করে সেখানে সকল শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হোক। এর মাধ্যমে নানা বিতর্কের অবসান ঘটানো সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মুহাম্মদ জুবায়ের বলেন, আমাদের প্রিয় দেশ ও মাতৃভূমি গত ৫৪ বছরে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। মানুষের জীবনমান ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির চিত্র এখন দৃশ্যমান । তবে ধনী ও গরিবের ব্যবধান এখনও অত্যন্ত প্রকট। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে মারাত্মকভাবে পিছিয়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, সারাদেশে নিরাপদ জীবন নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে যারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসবেন, তাদের প্রধান দায়িত্ব হবে সত্যিকারের পরিবর্তন নিশ্চিত করা। অন্যথায় জনঅসন্তোষ বারবার বিস্ফোরিত হবে এবং দেশজুড়ে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করবে।
তাইসির মাহমুদ বলেন, এই মুহুর্তে বাংলাদেশের মানুষের মুল চাওয়া হচ্ছে- একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ। মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরে আসবে- এই নিশ্চয়তাটুকু চায়। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে তা সম্ভব হতে পারে । তিনি বলেন, ভারত আমাদের একটি বড় প্রতিবেশী। ভারতের সাথে যেমন যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না, আবার ‘স্বামী-স্ত্রীর মতো সম্পর্ক’ও বলা যাবেনা। সম্পর্ক হতে হবে অত্যন্ত ব্যালেন্সড ও মর্যাদাশীল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এটা খুবই গুরুত্বপুর্ণ।