ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে উপজেলা প্রশাসনের নির্মিত শিশুপার্কটি সঠিক তদারকির অভাবে এখন রাতের বেলায় মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই পার্কটি প্রায় অচল অবস্থায় পড়ে আছে।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পার্কটির অবস্থা অত্যন্ত জরাজীর্ণ। চারদিকে নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর, ফলে সকালে থেকে বিকেল পর্যন্ত গরু-ছাগলের বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। সন্ধ্যার পর সাধারণ মানুষের চলাচল কমতেই সেখানে জড়ো হয় মাদকসেবীদের দল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সম্প্রতি এলাকায় চুরি, জুয়া এবং মাদকসেবীদের তৎপরতা বেড়েছে। মাদক কেনার টাকা যোগাতে অনেকেই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।
পার্কটি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্মাণ শুরু হয় এবং ২০১৮ সালের নভেম্বরে চালু হয়। প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা এই পার্ক একসময় শিশু-কিশোরদের প্রধান বিনোদনস্থল ছিল। স্থানীয়রা জানান, পার্কটি চালুর পর আশপাশের এলাকা ছিল প্রাণবন্ত এবং শত শত মানুষ এখানে ঘুরতে আসতেন।
কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ পুরোপুরি ভিন্ন। বখাটেদের উৎপাত, মাদক সেবন ও নিরাপত্তাহীনতা শিশুদের জন্য পার্কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। স্থানীয়দের দাবি—সঠিক নজরদারি ও সংস্কার কাজ শুরু হলে পার্কটি আবারও শিশুদের জন্য নিরাপদ বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।
স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশবাদী সংগঠন ‘অক্সিজেন’-এর সভাপতি মো. মোজাহেদুর ইসলাম ইমন বলেন, “উপজেলা প্রশাসনের তৈরি এই উন্মুক্ত স্থানটি অবহেলায় পড়ে আছে। রাতে মাদকসেবীদের আধিপত্য যেমন সামাজিক বিপদের ইঙ্গিত দেয়, তেমনি দিনে শিশু-কিশোরদের নিরাপদ খেলার সুযোগও প্রশ্নের মুখে ফেলছে।”
হরিপুর থানার ওসি জাকারিয়া মণ্ডল জানান, পার্কে অভিযান চালিয়ে একাধিকবার মাদকসহ আসামি ধরা হয়েছে। মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, বিষয়টি ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে। সন্ধ্যার পর পার্কসহ সম্ভাব্য মাদক স্পটগুলোতে পুলিশি টহল বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পার্কে সীমানাপ্রাচীর এবং বৈদ্যুতিক লাইট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হবে।