ব্রয়লার বা পোলট্রি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অযথাযথ ব্যবহারের ফলে মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া বা ‘সুপারবাগ’ তৈরি হচ্ছে, যা মানুষের জরুরি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা কমাচ্ছে। এছাড়া পোলট্রি খামারের বর্জ্য অপচয় পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের গবেষণা অনুযায়ী, দেশের ব্রয়লার উৎপাদনের ৭০–৮০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিরা সরবরাহ করেন, যারা ভেটেরিনারি পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন। এতে মাংসে অ্যান্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ থাকে এবং ই. কোলাই-এর ৭৫ শতাংশেরও বেশি মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট। মুরগির অন্ত্রে ‘এমসিআর-১’ জিনও শনাক্ত হয়েছে, যা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক কোলিস্টিনকে অকার্যকর করে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেন, খাদ্যচক্রের মাধ্যমে অল্পমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক দীর্ঘমেয়াদে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি, অঙ্গপ্রতঙ্গের বিষক্রিয়া, অন্ত্রের ক্ষতি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে।
পোলট্রি বর্জ্যও বিপুল পরিমাণে জমি ও জলাশয় দূষণ করছে। দেশে বছরে ২০০ মিলিয়ন মুরগির বর্জ্য পরিবেশে ছড়াচ্ছে, যা ভূগর্ভস্থ ও নদীর পানি দূষণ এবং অ্যামোনিয়া নিঃসরণ বৃদ্ধি করছে।
বাকৃবি অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “পোলট্রি শিল্প দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করছে, কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। ‘ওয়ান হেলথ’ নীতি মেনে প্রোবায়োটিক ব্যবহারে জোর, বায়োসিকিউরিটি বৃদ্ধি, টিকাদান, নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির নিয়ন্ত্রণ জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “সময় মতো সচেতন হলে পোলট্রি শিল্পকে নিরাপদ, লাভজনক ও টেকসই পথে রাখা সম্ভব। আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ খাবার নিশ্চিত করা আমাদের আজকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।”