অ্যাশেজের প্রথম দুই টেস্টে টানা হার ইংল্যান্ডকে সিরিজে ২–০ ব্যবধানে পিছিয়ে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইংলিশদের পক্ষে সিরিজ জেতা প্রায় অসম্ভব বলেই মনে করছেন অনেকে। যদি অলৌকিকভাবে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে, তাহলে সেটি ভবিষ্যতে হলিউডি থ্রিলারের গল্প হতে পারে—কিন্তু বাস্তবতা বলছে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আরেকবার লজ্জাজনক পরাজয়ের ঝুঁকিই বেশি।
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ১০টি অ্যাশেজে এ নিয়ে অষ্টমবার প্রথম দুই টেস্টে হারের মুখ দেখল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই দেশের সিরিজে প্রথম দুই টেস্ট হারার দিক থেকেও ইংল্যান্ডই এগিয়ে—১৭ বার। অস্ট্রেলিয়ার এমন ঘটনা মাত্র দুইবার, সেটিও বিশেষ পরিস্থিতিতে।
বেন স্টোকসের ক্যারিয়ারের নাটকীয় মুহূর্তগুলো কিংবা ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ মাথায় এনে সামান্য আশাবাদী হওয়া যায়, তবে অ্যাশেজের ইতিহাস তেমন সান্ত্বনা দেয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ২–০ পিছিয়ে পড়া দল ১৮ সিরিজের ১৬টিতেই তিন বা তার বেশি ব্যবধানে সিরিজ হারিয়েছে। ২০২৩ সালের ঘরের মাঠের সিরিজটিই বড় ব্যতিক্রম, যেখানে ইংল্যান্ড প্রায় ইতিহাস গড়তে যাচ্ছিল।
কিন্তু এবারকার অ্যাশেজ সেই সিরিজের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নয়। ইংল্যান্ড প্রতি উইকেটে ২২.৭ রানের বেশি তুলতে পারেনি, যেখানে অস্ট্রেলিয়া করেছে ৩৮.২। আগের দুই অ্যাশেজের ভৌতিক পরিসংখ্যানের সঙ্গেই মিলছে এই চিত্র। সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা—অস্ট্রেলিয়ায় ইংল্যান্ড টানা ১৭ টেস্টে জিততে পারেনি, যার ১৫টিতেই তারা পরাজিত।
লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতা এবার ইংল্যান্ডের জন্য বড় বোঝা হয়ে দেখা দিয়েছে। দুই টেস্টে অষ্টম থেকে দশম উইকেট মিলিয়ে তারা টিকেছে মাত্র ২৭.৫ ওভার—প্রতি ১৪ বলেই একটি করে উইকেট হারিয়েছে। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার লোয়ার অর্ডার লিড বড় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে পুরো অন্ধকার ছবির মাঝে কিছু আলোও আছে। দুই টেস্ট শেষে ইংল্যান্ডের স্পিনাররা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন—গত ৫০ বছরে এমন ঘটনা যখনই ঘটেছে, ইংল্যান্ড অ্যাশেজ জিতেছে (২০১০–১১, ১৯৮৬–৮৭, ১৯৭৮–৭৯)। ব্রিসবেনে উইল জ্যাকসের সাফল্য সেই পরিসংখ্যানে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
এ ছাড়া, শেষবার ইংল্যান্ড অ্যাশেজে প্রথম চার ইনিংসে ৮০ ওভারের কমে অলআউট হয়েছিল ২০০৫ সালে—সেই সিরিজটাই তারা জিতেছিল। ব্রিসবেনে স্টোকস–জ্যাকসের ৯৬ রানের সপ্তম উইকেটও আশাব্যঞ্জক দৃষ্টান্ত; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রেলিয়ায় সপ্তম উইকেটে ৯০ বা তার বেশি রান করার প্রতিবারই ইংল্যান্ড অ্যাশেজ জিতেছে।
এখন দেখার বিষয়—ইতিহাস কি আবারও ইংল্যান্ডের পক্ষে কথা বলবে, নাকি অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের দীর্ঘদিনের ব্যর্থতার ইতিহাসই পুনরাবৃত্তি হবে।