সিলেটের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার আবেদন হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী আগাম অবসর চাইছেন। আবেদনকারীরা ব্যক্তিগত কারণ, মানসিক চাপ, কর্মপরিবেশ, বদলি–পদোন্নতির অনিশ্চয়তা, আর্থিক পরিকল্পনা কিংবা বিদেশে যাওয়ার বিষয়কে কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন।
প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ সূত্র মনে করছে, কর্মক্ষেত্রে দ্রুত পরিবর্তন, নতুন পরিবেশে খাপ খাওয়ানোর চাপ ও দায়িত্বের ধরন পাল্টে যাওয়া—এসবই অনেককে আগেভাগে অবসরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে সহকর্মীদের মাঝেও এ বিষয়ে কৌতূহল বাড়ছে। তাদের ধারণা, প্রশাসনের ভেতরে হয়তো বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি।
তিন বছরে ১১০টি আবেদন, অনুমোদন পেয়েছে অর্ধেকেরও কম
সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোট ১১০টি আগাম স্বেচ্ছায় অবসরের আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ৫৬টি আবেদন গৃহীত হলেও ৫৪টি বাতিল হয়েছে।
-
২০২২: ২৮টি আবেদন, অনুমোদন ১৬ — বাতিল ১২
-
২০২৩: ৩০টি আবেদন, অনুমোদন ১৫ — বাতিল ১৫
-
২০২৪: ৫২টি আবেদন, অনুমোদন ২৫ — বাতিল ২৭
মেডিকেল বোর্ডের মূল্যায়নে দেখা গেছে, বাতিল হওয়া আবেদনের অধিকাংশেই উল্লেখিত অক্ষমতার যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আবেদনকারীদের মধ্যে পুলিশ, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, মাঠপর্যায়ের সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও রয়েছেন।
কেন বাড়ছে আগাম অবসরের আবেদন?
দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মতে—
-
দীর্ঘদিনের চাকরিজীবনের ক্লান্তি
-
অতিরিক্ত কর্মচাপ
-
মানসিক ও শারীরিক সমস্যা
-
আর্থিক অনিশ্চয়তা
—সব মিলিয়ে অনেকেই আগাম অবসরের পথ বেছে নিচ্ছেন।
আইন কী বলে?
সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮–এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী, কোনো কর্মচারী ২৫ বছর চাকরি পূরণের পর পেনশন সুবিধাসহ স্বেচ্ছায় অবসর নিতে পারেন। এজন্য তিন মাস আগে লিখিত নোটিশ দিতে হয়।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছে—চাকরিতে ১৫ বছর পূর্তিতেও পেনশন সুবিধাসহ আগাম অবসরের সুযোগ রাখা যেতে পারে। এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
বর্তমান নিয়মে—
-
চাকরির মেয়াদ যত বেশি, পেনশন তত বেশি
-
ন্যূনতম পেনশন ৯ হাজার টাকা
-
পাশাপাশি গ্র্যাচুইটি, অবসর-পরবর্তী ছুটির আর্থিক সুবিধা ও অন্যান্য প্রাপ্য সুবিধাও পাওয়া যায়
মেডিকেল বোর্ড কীভাবে সিদ্ধান্ত দেয়?
সিলেটের সিভিল সার্জন মো. নাসির উদ্দিন জানান, শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার কারণে কেউ অবসরের আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তা মেডিকেল বোর্ডে পাঠায়। বোর্ডে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা থাকেন। যাচাই–বাছাই শেষে বোর্ড সুপারিশ করে আবেদনটি গ্রহণ বা বাতিল করা হবে কি না।