সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহুল আলোচিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের খালাস দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ আজ এক ঐতিহাসিক রায়ে এই সিদ্ধান্ত দেন, যা বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দেয়।
খালাসের পক্ষে শুনানি পরিচালনা করেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, এবং অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীরা। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী মো. আসিফ হাসান।
শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা দাবি করেন, এই মামলায় কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি। খালেদা জিয়া ট্রাস্টের অর্থ সংক্রান্ত কোনো নথিতে স্বাক্ষর করেছেন, এমন কোনো তথ্য প্রসিকিউশন দেখাতে পারেনি। উপরন্তু, যে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল, তা ব্যাংক হিসাবে সুরক্ষিত রয়েছে এবং সেই অর্থ আসলে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা মামলাটিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে উল্লেখ করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, এই মামলায় বেগম খালেদা জিয়া কোনো তহবিল তসরুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। দুদকের পক্ষ থেকেও বলা হয়, “টাকা আত্মসাৎ হয়নি, বরং ফান্ডটি স্থানান্তরিত হয়েছে এবং সেটি ব্যাংক হিসাবে রক্ষিত আছে।”
২০১৮ সালে বিচারিক আদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন এবং পরে হাইকোর্ট সেই সাজা ১০ বছরে উন্নীত করে। আজকের রায়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের সেই রায় বাতিল করে বেগম খালেদা জিয়াসহ সব আসামিকে খালাস দেন।
বিগত কয়েক বছর ধরে এই মামলাটি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত ছিল। বর্তমান রায় বিএনপি ও খালেদা জিয়ার সমর্থকদের কাছে ন্যায়বিচারের এক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আইন বিশেষজ্ঞরা এই রায়কে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতার একটি মাইলফলক বলে অভিহিত করেছেন।
আপিল বিভাগের এই রায় খালেদা জিয়ার জন্য শুধু আইনি বিজয়ই নয়, বরং রাজনৈতিকভাবেও তা তাৎপর্যপূর্ণ। খালাসের মধ্য দিয়ে তিনি আবারও ন্যায়বিচারের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।