ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের হয়রানি থেকে মুক্তির আশায় চালু হওয়া প্রিপেইড মিটার এখন নিজেই হয়ে উঠেছে ভোগান্তির আরেক নাম। রাজধানীসহ দেশের নানা স্থানে গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন, রিচার্জ করা অর্থের বড় অংশ অজানা খাতে কেটে নেওয়া হচ্ছে—যার স্বচ্ছ ব্যাখ্যা মিলছে না বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর কাছ থেকে।
উত্তরা এলাকার বাসিন্দা মামুন উদাহরণ হিসেবে জানান, তিনি এক হাজার টাকা রিচার্জ করতেই সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ২৫০ টাকা কেটে নেওয়া হয় ভ্যাট, ট্যাক্স বা অজ্ঞাত চার্জের নামে। বাকি অর্থ তিন দিনের ব্যবহারে শেষ হয়ে যায়, যেখানে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারে পোস্টপেইড মিটারে তার মাসিক বিল হতো ৩ হাজার টাকার আশপাশে।
শুধু মামুন নন, এমন অভিযোগ হাজার হাজার প্রিপেইড গ্রাহকের। তাদের ভাষায়, “টাকা রিচার্জ করলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই একাধিক চার্জ কেটে নেওয়া হয়—কত টাকা, কোন খাতে, কেন কাটা হচ্ছে, তার কোনো স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয় না।”
একাধিক গ্রাহক বলেন, আগে যেখানে মাসে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা বিল হতো, এখন সেটি ২ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ডিমান্ড চার্জ, মেইনটেন্যান্স চার্জ, ভ্যাট, সার্ভিস চার্জ ইত্যাদি নাম দিয়ে বিভিন্ন অজুহাতে টাকা কাটা হলেও তাদের ব্যাখ্যা স্পষ্ট নয়।
প্রিপেইড মিটার সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে বিদ্যুৎ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান ডেসকোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, “গ্রাহকদের সঙ্গে চরম খামখেয়ালি আচরণ করছে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থাগুলো। এসব চার্জের ব্যাখ্যা না দেওয়া এবং গ্রাহকের প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াটা দুঃখজনক ও অন্যায্য।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) উচিত এসব বিষয়ে কঠোর নজরদারি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা না করে এসব সংস্থার পক্ষ নেওয়াটা কমিশনেরও ব্যর্থতা।”
উল্লেখ্য, ২০০৪ সাল থেকে দেশে ধাপে ধাপে প্রিপেইড মিটার চালু হয়, মূলত বিদ্যুৎ অপচয় রোধ এবং ভুল বা ভূতুড়ে বিলের হয়রানি থেকে গ্রাহকদের রক্ষায়। তবে বাস্তবে এটি অনেক ক্ষেত্রেই নতুন ধরনের হয়রানির উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।