বাংলা চলচ্চিত্রের নব্বই দশকের জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহর মৃত্যু নিয়ে প্রায় তিন দশক পর নতুন তথ্য উঠে এসেছে আদালতের নথিতে। দীর্ঘদিন আত্মহত্যা বলা হলেও, সাম্প্রতিক রায়ের ভিত্তিতে এখন এই ঘটনাকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছে আদালত।
ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হকের দেওয়া রায়ে বলা হয়েছে, আসামি রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন — সালমান শাহ আত্মহত্যা করেননি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
রেজভীর জবানবন্দি অনুযায়ী, সালমান শাহকে হত্যার মূল পরিকল্পনা করেন তার শাশুড়ি লতিফা হক লুসি। রাজধানীর গুলিস্তানের একটি বারে বসে ১২ লাখ টাকায় ‘কিলার’ ভাড়া করা হয়। এ পরিকল্পনায় অংশ নেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, খলনায়ক ডনসহ মোট ১১ জন।
জবানবন্দিতে বলা হয়, ১৯৯৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী দলটি সালমানের বাসায় যায়। প্রথমে তাকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করা হয়, পরে ইনজেকশন প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়। এরপর ঘটনাটি আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, রেজভীর জবানবন্দি অবজ্ঞা করার সুযোগ নেই; এতে স্পষ্টভাবে হত্যার বিবরণ দেওয়া হয়েছে। অথচ সে সময় পুলিশ সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে গ্রহণ করে কোনো হত্যা মামলা নেয়নি — যা আইনের ব্যত্যয়।
রায়ের পর সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই আলমগীর কুমকুম বাদী হয়ে রমনা থানায় নতুন করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আদালত আগামী ৭ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন — সামিরা হক, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, ডন, ডেভিড, জাভেদ, ফারুক, রুবী, আ. ছাত্তার, সাজু ও রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ।
নীলা চৌধুরী বলেন, “যারা ২৯ বছর ধরে সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছে, তাদের বিচার চাই।”
আইনজীবী আবিদ হাসান জানান, “রেজভীর জবানবন্দিতে স্ত্রী, শাশুড়ি, ডন ও আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ সকলের সম্পৃক্ততার পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। আমরা এই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণ বিচার চাই।”
সূত্র: কালবেলা






