রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে গড়ে উঠেছে একাধিক “মিনি পাসপোর্ট অফিস”। বাইরে থেকে দর্জি বা ফটোকপির দোকান মনে হলেও, ভেতরে চলছে পাসপোর্ট বানানোর অবৈধ বাণিজ্য। সাধারণ মানুষকে সহজে পাসপোর্ট করে দেওয়ার প্রলোভনে দ্বিগুণ-তিনগুণ অর্থ আদায় করছে এসব চক্র। এজন্য নকল সিল ও ভুয়া সরকারি স্বাক্ষর ব্যবহার করে কাগজপত্র ‘সত্যায়ন’ করা হচ্ছিল।
সম্প্রতি আগারগাঁও তালতলায় ‘মহিন উদ্দিন টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিক্স’ নামে একটি দর্জির দোকানে অভিযান চালিয়ে ৮৬টি পাসপোর্ট, অর্ধশতাধিক পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেটসহ বিপুল পরিমাণ আলামত জব্দ করে র্যাব।
র্যাব–২ এর পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান বলেন, “মালিকের উপস্থিতিতে দোকানটি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ কাগজপত্র, জাল ও আসল পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় কৌশলে একজন পালিয়ে গেলেও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
তদন্তে জানা গেছে, গ্রেফতার মহিন উদ্দিন ও পলাতক মো. লতিফ এই চক্রের মূল হোতা। তারা দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট অফিসের আশপাশে দোকানের আড়ালে এই অবৈধ কাজ পরিচালনা করছিল।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বাইরে থেকে দোকানগুলোতে কিছুই বোঝা যেত না। র্যাবের অভিযানের পরই প্রকাশ পায় গোপন কর্মকাণ্ডের আসল চিত্র।
উদ্ধার করা পাসপোর্টগুলোর মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অনেকেই জানান, তারা “ঝামেলাবিহীন দ্রুত পাসপোর্ট” পাওয়ার আশায় বাড়তি টাকা দিয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন।
র্যাব জানায়, জব্দ করা কাগজপত্রে ব্যবহৃত সরকারি কর্মকর্তাদের সিল ও স্বাক্ষরও ভুয়া। এমনকি যেসব চিকিৎসকের নামে সিল ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের কেউই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মরত নন।
র্যাব–২ এর পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান আরও বলেন, “চক্রটি পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার আগেই সেবাপ্রত্যাশীদের টার্গেট করত এবং বিভিন্ন ‘প্যাকেজে’ দ্রুত পাসপোর্ট করার প্রলোভন দেখাত। তাদের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিসের কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারীর সম্পৃক্ততা আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, “এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”