বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ পাচার করে কানাডায় বিলাসবহুল জীবন গড়েছেন অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি। দেশটির টরন্টো ও আশপাশের অভিজাত এলাকায় গড়ে উঠেছে কথিত ‘বেগমপাড়া’, যেখানে অবস্থান করছেন শত শত বাংলাদেশি আমলা, রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী।
বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থের একটি বড় অংশ গেছে কানাডায়, যদিও সরকারের নজর বেশি ছিল যুক্তরাজ্য, ইউএই ও ইউরোপের অন্যান্য দেশে। কানাডার সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৩ হাজারের বেশি বাংলাদেশি দেশটিতে স্থায়ী বাসিন্দা (PR) হয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিনিয়োগকারী কোটায় PR নেওয়া অনেকেই দুর্নীতির টাকায় কানাডায় বিনিয়োগ করেছেন। তারা পরিবারসহ কানাডায় আরামদায়ক জীবনযাপন করছেন—যার পেছনে মূলধন এসেছে বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে।
‘বেগমপাড়া’ শব্দটির উৎস একটি ভারতীয় তথ্যচিত্র—‘Begumpura: The Wives’ Colony’—যেখানে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত পুরুষদের স্ত্রীদের নিঃসঙ্গ জীবনের কথা তুলে ধরা হয়। সেই ধারণা থেকে টরন্টোর মিসিসাগার কয়েকটি ভবন পরিচিতি পায় ‘বেগমপুরা’ নামে। বাংলাদেশে এই ধারণাকে রূপান্তরিত করা হয় ভিন্নভাবে—এখানে বেগমপাড়া মানে এমন জায়গা, যেখানে দুর্নীতিবাজরা অবৈধ অর্থে কিনেছেন সম্পদ এবং পরিবারসহ সেখানে থাকছেন।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সরাসরি নয়—দুর্নীতির অর্থ প্রথমে পাচার হয় তৃতীয় দেশে (যেমন: সিঙ্গাপুর, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র)। সেখান থেকে বৈধ রূপ দিয়ে টাকা নেওয়া হয় কানাডায়। যেমন, কেউ কেউ প্রথমে সিঙ্গাপুরে টাকা পাঠিয়ে তারপর সেখান থেকে বিনিয়োগ দেখিয়ে কানাডায় বাড়ি কিনেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব ড. আহমদ কায়কাউসের নাম এসেছে এমন অর্থপাচারের ঘটনায়। তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করে তথ্য গোপন করে দেশে ফিরে চাকরি চালিয়ে যান এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় গড়ে তোলেন সম্পদ।
বিটিভির সাবেক কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তারও স্বামীকে কানাডায় পাঠিয়ে সেখানকার নামে অর্থ পাচার করেছেন—এমন অভিযোগ রয়েছে।
বড় বড় কনডোমিনিয়াম, টরন্টোর বেলভিউ, সিএন টাওয়ারের আশপাশ, মিসিসাগা, রিচমন্ড হিল, মার্কহামসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এদের বাড়ি আছে। অনেকেই এসব বাড়ি কিনে রেখে দেশে চলে গেছেন। বাড়ির দাম ১ থেকে ২ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলারের বেশি হলেও আয় অনুযায়ী এসব সম্পদ অস্বাভাবিক।
যে ইনভেস্টমেন্ট ক্যাটাগরিতে এসব লোকজন কানাডায় প্রবেশ করেছিলেন, তা ২০১৪ সালে বন্ধ করে দেয় কানাডা সরকার। কারণ—এরা প্রায় কেউই পর্যাপ্ত কর দিচ্ছিলেন না।
কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশি ধনাঢ্য লুটেরাদের সংখ্যা কয়েকশ’, শুধু টরন্টো অঞ্চলে অন্তত ২০০ জনের মতো। বাস্তবিকভাবে ‘বেগমপাড়া’ একটি নির্দিষ্ট এলাকা নয়, বরং এটি একটি বাস্তবতা, যা গড়ে উঠেছে অবৈধ অর্থ আর প্রভাবশালীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।