বিয়ে—ইসলামে নারী ও পুরুষের বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম। আর এই বন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো দেনমোহর। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একজন নারীর অধিকার এবং ইসলামী শরিয়তের একটি আবশ্যিক বিধান।
দেনমোহর এমনভাবে নির্ধারণ করা উত্তম, যা বাস্তব ও পরিশোধযোগ্য হয়। যদিও তাৎক্ষণিকভাবে দেনমোহর পরিশোধ না করলেও বিয়ে শুদ্ধ হয়, তবে পরবর্তীতে তা আদায়ের সময় নির্ধারণ করা জরুরি। আর যদি কোনো স্বামী দেনমোহর আদায়ের কোনো পরিকল্পনা না করে থাকেন, শরিয়ত সেই স্ত্রীর অধিকার স্বীকৃত করে—তিনি নিজেকে স্বামীর কাছে হস্তান্তর করা থেকে বিরত থাকতে পারেন। এমন অবস্থাতেও স্বামীকে স্ত্রীর ভরণপোষণ চালিয়ে যেতে হবে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন: “আর মুমিন নারীদের মধ্যে সতী–সাধ্বী নারীদের এবং তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যেও সতী–সাধ্বী নারীদের সঙ্গে বিয়ে বৈধ; যদি তোমরা তাদের দেনমোহর প্রদান করো বিবাহের উদ্দেশ্যে, প্রকাশ্য ব্যভিচার বা গোপন প্রণয়িনী গ্রহণের উদ্দেশ্যে নয়।”
— (সূরা মায়েদা, আয়াত: ৫)
হজরত মুহাম্মদ (সা.) দেনমোহরের গুরুত্ব ও এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি কোনো নারীকে দেনমোহর আদায়ের ইচ্ছা ছাড়াই বিয়ে করে, আল্লাহ ভালো করেই জানেন তার নিয়ত কি ছিল। সে আল্লাহকে ধোঁকা দেওয়ার স্পর্ধা দেখাল এবং অন্যায়ভাবে সেই নারীর সম্মান ভোগ করল। কেয়ামতের দিন সে ব্যভিচারীরূপে উপস্থাপিত হবে।”
— (মুসলিম আহমদ)
দেনমোহর কতটা সহজ হতে পারে, তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় একটি প্রসিদ্ধ হাদিসে। হজরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) বর্ণনা করেন:
এক নারী নবীজির (সা.) কাছে এসে নিজেকে তার কাছে বিয়ের জন্য প্রস্তাব দেন। নবীজি (সা.) কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর একজন সাহাবি সেই নারীর সঙ্গে বিয়েতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু তার কাছে দেনমোহর হিসেবে দেওয়ার মতো কিছুই ছিল না।
নবীজি (সা.) তাকে বলেন, ‘গিয়ে দেখো, কোনো লোহার আংটি আছে কি না।’ সাহাবি ফিরে এসে জানান, তার কিছুই নেই। শেষে তিনি জানান, তার মুখস্থ কয়েকটি সূরা রয়েছে। তখন নবীজি (সা.) বলেন: “তোমার মুখস্থ কোরআনের বিনিময়েই আমি তোমার সঙ্গে এই নারীর বিবাহ সম্পাদন করলাম।”
— (বুলুগুল মারাম, হাদিস: ৯৭৯)
নবীজি (সা.) সহজ দেনমোহর নির্ধারণ করলেও সাহাবিদের যুগে সমাজ ও আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনায় দেনমোহরের পরিমাণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ ইসলামে এর পরিমাণ নির্ধারণে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বরং পাত্র–পাত্রীর পারস্পরিক সম্মতি এবং পারিবারিক সামর্থ্য অনুযায়ী তা নির্ধারণ করা উচিত, যাতে কারও ওপর অযথা চাপ বা জুলুম না হয়।
দেনমোহর ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বাধ্যতামূলক বিষয়। এটি নারীকে সম্মান দেওয়ার প্রতীক এবং স্বামীর ওপর একটি স্পষ্ট দায়িত্ব। ইসলামের দৃষ্টিতে দেনমোহর হওয়া উচিত সহজ, বাস্তবসম্মত ও সম্মানের সাথে আদায়যোগ্য।