জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় দেন। মামলার দ্বিতীয় অভিযোগে তাকে ফাঁসির দণ্ড এবং প্রথম অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ে আদালত জানায়, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তবে সত্য উদঘাটনে সহযোগিতা করায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন—যিনি রাজসাক্ষী হয়েছেন—তার সাজা কমানো হবে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ে প্রথম বিবিধ মামলাটি করা হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। ১৭ অক্টোবর মামলার প্রথম শুনানি হয় এবং আদালত তাকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
প্রথমে শেখ হাসিনাই একমাত্র আসামি ছিলেন। পরে চলতি বছরের ১৬ মার্চ প্রসিকিউশনের আবেদনের ভিত্তিতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়।
প্রসিকিউশন মোট পাঁচটি অভিযোগ আনে। তদন্ত প্রতিবেদনে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার নথি জমা দেওয়া হয়, যেখানে তথ্যসূত্র, জব্দতালিকা, দালিলিক প্রমাণ এবং শহীদদের তালিকার বিশদ বিবরণ রয়েছে।
১ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান এবং আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে। ১০ জুলাই তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়।
পরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে এবং তিনি সাক্ষ্য দেন।
২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সমাপনী যুক্তি উপস্থাপন করে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। চিফ প্রসিকিউটরও একই দাবি করেন, যদিও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী তাদের খালাস চান। এরপর ট্রাইব্যুনাল ১৩ নভেম্বর রায়ের তারিখ ঘোষণা করে।
অভিযোগসমূহের সারসংক্ষেপ
১ম অভিযোগ
গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের সম্পর্কে ‘রাজাকারের বাচ্চা’ উল্লেখ করে উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। অভিযোগ অনুযায়ী এর পরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারি সমর্থকদের হামলায় প্রায় দেড় হাজার মানুষ নিহত ও প্রায় ২৫ হাজার আহত হন।
২য় অভিযোগ
অভিযোগে বলা হয়, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের দমন করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করেন। একাধিক অডিও রেকর্ডে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
৩য় অভিযোগ
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় তিনজনকেই অভিযুক্ত করা হয়।
৪র্থ অভিযোগ
ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত ছয়জনকে গুলি করে হত্যার দায়ে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান ও মামুন অভিযুক্ত।
৫ম অভিযোগ
আশুলিয়ায় ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায়ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।