কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা অতীতের অবাধ্য জাতিগুলোর ইতিহাস তুলে ধরে মানুষের জন্য সতর্কবার্তা দিয়েছেন। এসব জাতির মধ্যে সামুদ জাতি অন্যতম—যাদের শক্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নত জীবনযাত্রা সত্ত্বেও দুঃসহ পরিণতি বরণ করতে হয়েছিল অবাধ্যতা ও কুফরির কারণে।
মানুষ যতই সুখ বা ঐশ্বর্যের মধ্যে থাকুক না কেন, সবকিছুই যে আল্লাহর দেয়া এবং একদিন সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরতে হবে—এ শিক্ষা দেয় সামুদ জাতির পরিণতি।
সুরা হুদ-এর ৬৭–৬৮ নম্বর আয়াতে সামুদ জাতির ধ্বংসের চূড়ান্ত দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহর প্রেরিত নবী হজরত সালেহ (আ.)–এর সতর্কবার্তা অগ্রাহ্য করার পর এক ভয়ংকর আসমানি আজাব তাদের ওপর নেমে আসে।
আয়াতে উল্লেখ আছে—গগনবিদারী এক প্রচণ্ড আওয়াজ সামুদ জাতিকে আঘাত করে। মুহূর্তেই তারা নিজ নিজ ঘরে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করা এবং পৃথিবীতে অপরাজেয় শক্তিতে পরিচিত এই জাতি শেষপর্যন্ত আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায়নি। হজরত সালেহ (আ.) এবং তাঁর অনুসারীরা অবশ্য নিরাপদে রক্ষা পান।
হঠাৎ এক ভয়াল ভূমিকম্প ও বজ্রপাতের তীব্র শব্দ তাদের পুরো জাতিকে মুহূর্তে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
সামুদ জাতি ছিল শিল্প–সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ ও দক্ষ। আদ জাতির পরে তাদেরই সবচেয়ে বেশি উন্নতি ও সমৃদ্ধি দান করেছিলেন আল্লাহ তাআলা। তারা পাহাড় কেটে কারুকার্যপূর্ণ প্রাসাদ নির্মাণ করত, উন্মুক্ত প্রান্তরে গড়ে তুলত স্থাপত্যকীর্তি।
কিন্তু নৈতিকতা, মানবতা ও ন্যায়বিচার তাদের সমাজে ছিল অনুপস্থিত। কুফরি, শিরক এবং অবিচার চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। চরিত্রহীন লোকেরা নেতৃত্ব দখল করে নেয়। হজরত সালেহ (আ.) সত্যের দাওয়াত দিলেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে উচ্চবিত্ত শ্রেণি; সাধারণ মানুষই তাঁর প্রতি বেশি সাড়া দিয়েছিল।
সামুদ জাতির কেন্দ্র ছিল হিজর অঞ্চল—যা আজকের মদিনার উত্তর-পশ্চিমে, আল–উলা শহরের কাছাকাছি। এই স্থান এখনো প্রধান সড়কের পাশে দেখা যায়। রসুল (সা.) নির্দেশ দিয়েছিলেন এই এলাকায় অবস্থান না করার জন্য।
খ্যাতনামা পর্যটক ইবনে বতুতা তাঁর বিবরণে লিখেছেন—লাল রঙের পাহাড়ের বুক চিরে নির্মিত সামুদের দালানকোঠা এখনো যেন সদ্য নির্মিত মনে হয়। কিছু স্থানে মানুষের হাড়গোড় পর্যন্ত দেখা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী এই জাতি এখন কেবল ইতিহাসের পাতায়।
আদ ও সামুদ জাতির ইতিহাস স্পষ্ট করে দেয়—অত্যাচারী, উদ্ধত এবং সীমালঙ্ঘনকারীরা কেবল পরকালের বিচারেই নয়, দুনিয়াতেও আল্লাহর শাস্তি থেকে রক্ষা পায় না। তাঁদের পরিণতি মানবজাতির জন্য স্থায়ী সতর্কবার্তা।