মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর চলমান শোষণ, প্রতারণা ও ঋণদাসত্ব নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) জেনেভা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তারা বলেন, জালিয়াতিপূর্ণ নিয়োগ ব্যবস্থা ও নিয়মিত শোষণের কারণে এসব শ্রমিক এবং তাদের পরিবার গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়ায় বহু বাংলাদেশি শ্রমিক মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, অনিয়মিত নিয়োগ প্রক্রিয়া, পাসপোর্ট আটকে রাখা এবং চাকরির শর্ত না মানার মতো সমস্যার মুখে পড়ছেন। এতে তারা অতিরিক্ত ফি পরিশোধ করে গভীর ঋণের বোঝা বহন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
তথ্যে জানা গেছে, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া হাজারো শ্রমিককে অনুমোদিত ফি’র পাঁচ গুণেরও বেশি অর্থ দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট জব্দ, চুক্তির অসঙ্গতি, ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার এবং শ্রমিকের সম্মতি ছাড়াই অন্য কাজে পাঠানোর অভিযোগও উঠেছে।
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা জানান, অল্প কিছু রিক্রুটিং এজেন্সি দুর্নীতি, স্বচ্ছতার অভাব ও নিয়মতান্ত্রিক শোষণের মাধ্যমে একটি বন্ধ সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করছে। অনেক শ্রমিককে দেশ ছাড়ার আগে মিথ্যা ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করানো হয়েছে যাতে দেখানো হয়—তারা নাকি শুধু সরকারি ফি পরিশোধ করেছেন।
অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে দুই দেশের সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে—নিয়োগ এজেন্সির ওপর কঠোর নজরদারি বাড়ানো, কেন্দ্রীভূত চাকরি-পোর্টাল চালু করা, শ্রমিকদের কাছ থেকে নিয়োগ ফি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা এবং শোষণমূলক চক্র ধ্বংসে কার্যকর দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
এছাড়া মালয়েশিয়া সরকারকে শ্রমিকদের নির্বিচার আটক, হয়রানি বা ডিপোর্টেশনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে আরও শক্তিশালী সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে—অভিবাসী শ্রমিকদের অপরাধী হিসেবে দেখা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বর্তমানে মালয়েশিয়ার মোট বিদেশি শ্রমশক্তির ৩৭ শতাংশই বাংলাদেশি; ৮ লাখেরও বেশি কর্মী সেখানকার বৈধ কর্মপারমিট নিয়ে কাজ করছেন। দেশটির সবচেয়ে বড় শ্রমশক্তি হওয়া সত্ত্বেও তারা শোষণ ও নিয়োগজনিত ঋণের সমস্যায় ভুগছেন, যা নিয়ে ইতিমধ্যে বিক্ষোভও হয়েছে।