সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গুম-সংক্রান্ত একটি তথ্যচিত্রের শুটিংয়ে অংশ নিতে সিলেটের তামাবিল সীমান্তে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। শনিবার (১১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিলেট পৌঁছে তিনি সরাসরি যান সেই সীমান্ত এলাকায়, যেখানে থেকে ২০১৫ সালে তাকে ‘গুম’ করে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
ওই এলাকা পরিদর্শনের সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে সালাহউদ্দিন বলেন, “২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় আমাকে চোখ, হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় তামাবিল সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের শিলংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন আমি জানতাম না আমাকে সীমান্ত পার করানো হচ্ছে—আমার মনে হয়েছিল আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে কিংবা জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হবে।”
তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পর আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ এসে উদ্ধার করে। তখন বুঝতে পারি, আমি ভারতে আছি।”
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও জানান, তাকে প্রথমে একটি মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সে সময় তার মনে হয়েছিল, “এভাবেই হয়তো জীবনের বাকিটা সময় একজন ‘পাগল’ হিসেবে কাটাতে হবে।”
২০১৫ সালের ১০ মার্চ ‘গুম’ হওয়ার ৬৩ দিন পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে সালাহউদ্দিনকে খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর মামলা ও আইনি জটিলতার কারণে তিনি প্রায় নয় বছর ভারতে অবস্থান করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়। সে বছরের ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ৩ জুন সালাহউদ্দিন আহমদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুম সংক্রান্ত একটি অভিযোগ দাখিল করেন, যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়।
গুম ও রাজনৈতিক নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে বর্তমানে একটি পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিশন কাজ করছে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সংঘটিত গুম ও নিখোঁজের ঘটনা নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করছে প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয়। সেই তথ্যচিত্রের অংশ হিসেবে সালাহউদ্দিন আহমদের গুম হওয়া স্থান তামাবিল সীমান্তে শুটিং হয়, যেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে স্মৃতিচারণ করেন।
সকালে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কাহের শামীম, মিফতাহ সিদ্দিকী, এমরান আহমেদ চৌধুরী, রেজাউল হাসান কয়েস লোদী এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ।