সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগীদের শয্যা সংকট এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, ঘুষ ছাড়া বেড মেলে না, ওষুধও মেলে না প্রয়োজনমতো। ফলে অনেক রোগীকেই মেঝেতে থেকেই নিতে হচ্ছে চিকিৎসাসেবা।
হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। অনেকেই মেঝেতে শুয়ে সেবা নিচ্ছেন। অনেকে অভিযোগ করছেন, কেউ ছুটি পেলেই ওয়ার্ড বয়দের ‘খুশি’ করলে মিলছে ওই সিট।
রোগীর এক স্বজন জানান, “একজন রোগী ডিসচার্জ হওয়ার পর আমি সিট চাইলেও দিচ্ছিল না। পরে ওয়ার্ড বয়কে টাকা দিলে সিট পাই।”
তবে বিষয়টি স্বীকার না করলেও, অস্বীকারও করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহ নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। অনেক রোগী ও স্বজন জানান, বাইরে থেকেই কিনে আনতে হচ্ছে প্রাথমিক ও জরুরি ওষুধ।
এক রোগী বলেন, “হাসপাতালের ফার্মেসিতে গেলে বলে শেষ। অথচ বাইরে গেলে ওষুধ পাওয়া যায়, তবে অনেক বেশি দামে।”
শুধু শয্যা বা ওষুধ নয়—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর্মীদের আচরণ, এবং হাসপাতালের সামগ্রিক পরিবেশ নিয়েও রোগীরা হতাশ। ভেতরে-বাইরে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য, টয়লেটের নোংরা অবস্থা, এবং ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মীদের অসদাচরণ—সব মিলে এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি ওসমানী মেডিকেলে অভিযান চালায়।
দুদকের সিলেট কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জুয়েল মজুমদার বলেন: “ওষুধ, খাবার, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, আউটসোর্সিং কর্মীদের নিয়োগ ও বেতনসহ বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. বদরুল আমিন জানান: “আমরা অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। যেসব কর্মী আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিযুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরি বাতিল করা হচ্ছে।” তবে আশ্বাসের বাইরেও স্থায়ী কোনো পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫০০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার রোগীকে সেবা দিতে হয়, যা পুরো ব্যবস্থাপনার ওপর বিশাল চাপ তৈরি করছে।