বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে ই-পাসপোর্টধারীদের দ্রুত ও আধুনিক ইমিগ্রেশন সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপন করা হয়েছে ই-গেট। তবে বাস্তবে এই প্রযুক্তির সুবিধা পাচ্ছেন না যাত্রীরা। কারণ, ই-গেটে স্ক্যান শেষে এখনও তাদের সনাতন পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন ডেস্কে গিয়ে আবার যাচাই-বাছাইয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, ই-গেটে স্ক্যান করার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই হয় বটে, কিন্তু এরপরও পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) কাউন্টারে গিয়ে পুনরায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ফলে সময় অপচয় হচ্ছে এবং যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।
২০১৮ সালে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প চালু হয় এবং ২০২২ সালে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত দেশে এক কোটির বেশি মানুষ ই-পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। তবে হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট থাকলেও, প্রকৃতপক্ষে এর কার্যকর ব্যবহার হয়নি।
পাসপোর্ট স্ক্যানিংয়ের পর যাত্রীর তথ্য ই-গেট থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশের সার্ভারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাই হয় না। আবার ভ্রমণের সরকারি অনুমোদন, ভিসা, বিএমইটি সনদ ইত্যাদি তথ্যও যাচাই করা সম্ভব হয় না ই-গেটের মাধ্যমে। ফলে এসব যাচাই করতে গিয়ে আবারও সনাতন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হচ্ছে।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বর্তমানে দেশে ৪৪টি ই-গেট রয়েছে, যার মধ্যে শাহজালালে ২৬টি, চট্টগ্রামে ৬টি, সিলেটে ৬টি এবং দুইটি করে বেনাপোল ও বাংলাবান্ধায় রয়েছে। তবে যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ই-গেট ব্যবহারের পরও তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সনাতন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হচ্ছে।
সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরে ই-গেট থাকলেও সেটির সফটওয়্যারই এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে ইনস্টল হয়নি। ফলে যাত্রীরা ই-পাসপোর্ট নিয়েও পুরোনো পদ্ধতিতেই ইমিগ্রেশন করতে বাধ্য হচ্ছেন। চট্টগ্রামেও যাত্রীদের অভিযোগ, ই-গেট ব্যবহার করেও পুনরায় চেকিংয়ের কারণে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা সীমান্তে থাকা ই-গেটগুলোতেও একই চিত্র। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, ই-গেট ব্যবহার না করেই পাশ দিয়ে হেঁটে গিয়ে সনাতন ইমিগ্রেশন সারছেন, কারণ গেট ব্যবহারের পরও পুলিশি চেকিং এড়ানো যাচ্ছে না।
পাসপোর্ট অধিদপ্তর ও ই-পাসপোর্ট প্রকল্প কর্মকর্তারা দাবি করছেন, তাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে ইমিগ্রেশন পুলিশের সঙ্গে তথ্য সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে ই-গেট পুরোপুরি কার্যকর হচ্ছে না।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, চলতি সপ্তাহেই শাহজালালে ই-গেট পুরোপুরি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ই-পাসপোর্ট ও ই-গেট প্রযুক্তি চালুর মাধ্যমে যাত্রীসেবায় উন্নয়ন ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হলেও, আন্তঃসংস্থার সমন্বয়ের অভাবে সেটি এখনো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। যাত্রীদের হয়রানি রোধে এবং সময় বাঁচাতে ই-গেট ও ইমিগ্রেশন তথ্যভান্ডারের মধ্যে পূর্ণ সমন্বয় জরুরি।