জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের ধারণা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে কোনো ধরনের গণভোট বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নেবে না।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব গণতান্ত্রিক রীতির পরিপন্থী ও হাস্যকর। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী যদি পরিষদ ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করে, তবে সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে—এ ধারণা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।”
তিনি বলেন, বিএনপি প্রস্তাব দিয়েছে—আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হোক। এতে সময়, ব্যয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে সুবিধা হবে। প্রস্তাবের বিষয়ে প্রয়োজন হলে বিএনপি প্রধান উপদেষ্টার কাছেও যাবে।
ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব একপেশে ও জবরদস্তিমূলক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, “এতে প্রমাণ হয়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ হয়েছে তা ছিল অর্থহীন ও প্রহসনমূলক। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ারও অন্তর্বর্তী সরকারের নেই।”
তিনি আরও বলেন, “কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করার প্রস্তাব অবৈধ। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা কেবল সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশের স্বার্থে আমরা সবসময় ঐক্য চাই, প্রতারণা নয়। জাতিকে বিভক্ত করার যেকোনো উদ্যোগ অনৈক্য সৃষ্টি করবে এবং জাতীয় জীবনে অকল্যাণ ডেকে আনবে।”
সংস্কারকে বিএনপির অন্যতম রাজনৈতিক অঙ্গীকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিএনপি সবসময় গণতান্ত্রিক সংস্কারের পক্ষে। শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, খালেদা জিয়ার ভিশন–২০৩০ এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা—সবই এর প্রমাণ।”
জুলাই সনদের বিষয়ে অভিযোগ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, “ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব দফা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল, সেগুলোর কিছু অগোচরে পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি টানানোর বাধ্যবাধকতা বাতিলের বিষয়ে ঐকমত্য থাকলেও সেটি রাখা হয়েছে। আবার সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ বাতিলের বিষয়ে অধিকাংশ দলের সম্মতি থাকলেও সেটিও পরিবর্তন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘ এক বছরের আলোচনার পরও সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ প্রমাণ করেছে—এটি ছিল অর্থহীন, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল।”
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, সালাউদ্দিন আহমদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।