সিলেট শহরে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে যাত্রী ভোগান্তি চলছে দীর্ঘদিন ধরে। নির্দিষ্ট ভাড়ার তালিকা না থাকায় চালকরা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন, যা সাধারণ যাত্রীদের জন্য রীতিমতো ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, এক কিলোমিটারের পথেও কখনো কখনো ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে রিকশাচালকদের। সিএনজির ক্ষেত্রে ভাড়া শুরুই হয় ১০০ টাকা থেকে, যা বৃষ্টি বা রাতের বেলায় আরও বেড়ে যায়। অনেক চালক যাত্রার শুরুতে ভাড়া ঠিক করলেও গন্তব্যে পৌঁছে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করেন। এতে প্রতিবাদ করলে অনেক যাত্রীকে অশোভন আচরণের শিকার হতে হয়। তবে সব চালক এমন নন, অনেকেই নিয়ম মেনে ভাড়া নেন বলেও জানান যাত্রীরা।
২০১৫ সালে সিটি কর্পোরেশন নগরীর ৫১টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে রিকশাভাড়ার তালিকা টানিয়েছিল। কিন্তু তদারকি ও সচেতনতার অভাবে সেটি কার্যকর হয়নি। ফলে এক দশক পরেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি।
মজুমদারী এলাকার বাসিন্দা রফিক আহমদ বলেন, “বুধবার রাতে বৃষ্টির সময় জিন্দাবাজার থেকে মজুমদারী যেতে এক সিএনজি ২০০ টাকা চাইলো। পরে আরেক চালক স্বাভাবিক ভাড়ায় নিয়ে গেলো। কিন্তু আসল সমস্যা হলো—কোন রুটে কত ভাড়া হওয়া উচিত, সেটা যাত্রীরা জানেন না।”
মদিনা মার্কেট এলাকার বাসিন্দা খাদিজা বেগমও বলেন, “রিকশায় উঠার আগে ৪০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছিল। কিন্তু নামার সময় চালক ৫০ টাকা দাবি করেন। এমনটা প্রায়ই ঘটে।”
করোনা মহামারির সময় যাত্রী সীমিত করার অজুহাতে সিএনজি চালকরা এক দফা ভাড়া বাড়ান। পরবর্তীতে যাত্রী সংখ্যা স্বাভাবিক হলেও ভাড়া আর কমানো হয়নি। এমনকি চালকের পাশে যাত্রী বসানোর অনুমতি পাওয়ার পরও আবার ভাড়া বাড়ানো হয়। এখন পূর্ণ যাত্রী নিয়েও ভাড়া আগের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে।
এই নৈরাজ্য থামাতে এবার সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে পুলিশ। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) নতুন কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী জানিয়েছেন, নগরীর প্রতিটি রুটে সিএনজির নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা তৈরি করা হবে। সম্প্রতি এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “অতিরিক্ত ভাড়া, যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া আদায় এবং অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে তোলা—এসব বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এমন একটি ন্যায্য ভাড়ার তালিকা করতে চাই, যা দেখে জনগণ বুঝতে পারবে কোথায় কত ভাড়া।”
তবে নগরবাসীর দাবি, শুধু সিএনজি নয়-রিকশার ভাড়াও তালিকাভুক্ত করতে হবে। তাদের মতে, সিটি কর্পোরেশনের আগের উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এই বিশৃঙ্খলা চলছে। তারা মনে করেন, কেবল ভাড়ার তালিকা তৈরি করলেই হবে না-পুলিশ ও সিসিকের নিয়মিত তদারকির মাধ্যমেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব।