সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো প্রায়ই কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। তবে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং লিংক রোড না থাকার কারণে পর্যটকরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতে ভোগান্তি এবং অতিরিক্ত সময় ও ব্যয় ভোগ করছেন। এর ফলে সিলেটের সম্ভাবনাময় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের নাগালের বাইরে থেকে যাচ্ছে এবং পর্যটন খাত পিছিয়ে পড়ছে।
২০২৩ সালের জেলা প্রশাসক সম্মেলনে সিলেটের তখনকার জেলা প্রশাসক মুজিবুর রহমান এই সমস্যাটি তুলে ধরে ‘সিলেট–জাফলং–সাদাপাথর–ওসমানী বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের’ প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, সড়কটি নির্মাণ হলে পর্যটন খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে। সম্মেলনে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সাদাপাথর পর্যন্ত এবং সিলেট শহর থেকে জাফলং পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই তুলনামূলকভাবে ভালো। তবে জাফলং থেকে সাদাপাথর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার নতুন সড়ক নির্মাণ ও পুরোনো সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এ সড়কটি নির্মিত হলে পর্যটকরা সীমান্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। কক্সবাজারের ‘মেরিন ড্রাইভ’ এর আদলে সিলেটে গড়ে উঠবে ‘বর্ডার ড্রাইভ’।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮০০ কোটি টাকা এবং সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ বর্তমানে চলমান। আসন্ন জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত ‘বর্ডার ড্রাইভ’ সড়ক নির্মাণের ফলে পর্যটকরা মাত্র দুই দিনে সিলেটের ২৩টি জনপ্রিয় স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। এর মধ্যে রয়েছে—হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরাণ (রহ.) মাজার, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, লাক্কাতুড়া চা বাগান, বাইশটিলা, খাদিম রিসোর্ট, সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, উতমাছড়া, দমদমছড়া, লক্ষণছড়া, পান্থুমাই, খাসিকম, জাফলং, তামাবিল, নলিউরি ফলস, ডিবিরহাওর, জৈন্তাপুর, লালাখাল ও রাতারগুল। বর্তমানে একদিনে মাত্র দুই–তিনটি পর্যটন স্পট ঘোরা সম্ভব।
সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আমীর হোসেন বলেন, সীমান্তের সৌন্দর্য সামনে রেখে এবং বসতবাড়ি পিছনে রেখে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই সড়ক দিয়ে যেতে যেতে পর্যটকরা সীমান্তের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সিলেটের পর্যটন বিকাশ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।