Uk Bangla Live News

তারুণ্যের ভাবনায় দেশ সংস্কার

গোয়াইনঘাট প্রেসক্লাবের
ডেস্ক সংবাদ

রক্তে আমার তারুণ্য, কন্ঠে বাজে –

“অবহেলিত, অধিকার খুঁজে ফিরি,
মুক্তির পথে তরুণ, সবার পাশে দাঁড়িয়ে।
হৃদয়ের জোয়ারে জাগুক নতুন সূর্য,
নতুন দিনের স্রোতে, সমতার সুর বাজিয়ে।”

আমি তরুণ প্রজন্মের একজন প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বাস করি যে, দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে আমাদের তরুণদের হাতেই রয়েছে মূল চাবিকাঠি। আমরা যারা নিজেদের নিয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা করি, তাদের জন্য দেশ সংস্কার এবং সমৃদ্ধির পথ অতিক্রম করার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি জরুরি। ইতিহাসে তরুণদের ভূমিকা বরাবরই বিশাল এবং সময়ের চাহিদা অনুসারে পরিবর্তনের জন্য তাদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের প্রমাণ আমরা বারবার পেয়েছি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত—প্রতিটি ঐতিহাসিক আন্দোলনে তরুণরা নেতৃত্ব দিয়েছে এবং জাতির ভাগ্য পরিবর্তনের মূল কান্ডারী হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব, তরুণদের শক্তির আধুনিক প্রতীক হিসেবে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন এবং বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন বাস্তবায়নে নতুন করে প্রেরণা জুগিয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও তরুণদের দায়িত্ব :

আমরা একটি যুগান্তকারী সময়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে তরুণরা দেশের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে গঠিত। আমাদের হাতে রয়েছে শক্তি, উদ্ভাবনী চিন্তা এবং আধুনিক প্রযুক্তির সক্ষমতা। সময়ের প্রয়োজন হলো, আমরা এই শক্তিকে কেবল নিজের উন্নতির জন্য নয়, পুরো জাতির উন্নয়নের জন্য কাজে লাগাই। তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হল সমাজের বঞ্চিত ও অবহেলিত অংশের পাশে দাঁড়ানো এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে একটি সমানাধিকারের দেশ গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া এটাই আমাদের প্রজন্মের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

শিক্ষার উন্নয়ন ও দক্ষতার বিকাশ :

একটি জাতির উন্নয়নের মূল ভিত্তি হল শিক্ষা। তবে, বর্তমানে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু পরীক্ষামূলক দক্ষতায় সীমাবদ্ধ। তরুণদের জন্য প্রয়োজন এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা, যা বাস্তব জীবনের জন্য আমাদের প্রস্তুত করবে এবং সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমাজে অবদান রাখতে সহায়তা করবে। শুধু পুঁথিগত বিদ্যা নয়, আমাদের চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে। যেখানে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, উদ্ভাবনী উদ্যোগ এবং বাস্তবিক জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। একটি শক্তিশালী এবং কার্যকরী শিক্ষাব্যবস্থা তৈরির মাধ্যমে আমাদের দেশের তরুণরা শুধু নিজেদের ভবিষ্যতই নয়, বরং পুরো জাতির ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির সম্ভাবনা :

আজকের যুগে তরুণদের শুধুমাত্র চাকরির জন্য অপেক্ষা না করে, উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে হবে। আমাদের তরুণরা প্রযুক্তি, কৃষি, এবং সেবা খাতের নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। সরকারের তরুণ উদ্যোক্তা সহায়তা কর্মসূচির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের প্রশিক্ষণ এবং ফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের সহায়তা পেলে আমরা তরুণরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারি।

সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও মানবিক মূল্যবোধ :

তরুণ প্রজন্ম হিসেবে আমাদের কাছে শুধু নিজের উন্নতি নয়, বরং সমাজের সব স্তরের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করা প্রয়োজন। আমাদেরকে একটি মানবিক মূল্যবোধে ভরপুর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকার এবং সুযোগ সমানভাবে রক্ষা পাবে। দুর্নীতি, বৈষম্য, এবং সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের কণ্ঠকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে সব শ্রেণির মানুষের সমান অধিকার থাকবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।

রাজনৈতিক পরিবর্তন ও তরুণ নেতৃত্ব :

দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে তরুণদের ভূমিকা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব আমাদের দেখিয়েছে যে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে সক্ষম। আমাদের উচিত রাজনৈতিক আদর্শে দৃঢ় থেকে গণতন্ত্র এবং ন্যায়ের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব তৈরি করা। তরুণদের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে এবং তাদের নেতৃত্বের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

নতুন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোগে তারুণ্যের ভূমিকা :

আমাদের প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বেড়ে উঠেছে, যেখানে প্রতিদিনই নতুন নতুন উদ্ভাবন আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠছে। প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটের ব্যাপক বিস্তার আমাদেরকে বৈশ্বিক সমাজের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং উদ্ভাবনী চিন্তা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ব্লকচেইন, রোবোটিক্স, এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে আমরা তরুণরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমাদের শুধু প্রযুক্তির ভোক্তা নয়, উদ্ভাবক ও নির্মাতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে নিজেদের। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার আমাদেরকে জাতীয় উন্নয়নের পথে দ্রুত নিয়ে যেতে পারে।

নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নে তারুণ্যের দায়িত্ব :

তরুণ প্রজন্মের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো নারীর ক্ষমতায়ন। আমাদের সমাজে এখনও নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার। তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় ভূমিকা প্রয়োজন। আমরা এমন একটি সমাজ গড়তে চাই, যেখানে নারী এবং পুরুষের সমান অধিকার থাকবে। নারীর কর্মসংস্থান, শিক্ষা, এবং নেতৃত্বের সুযোগ বাড়িয়ে একটি সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে আমরা তরুণরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারি।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ ও বিকাশ :

একটি জাতির উন্নতির সঙ্গে তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সংরক্ষণ এবং বিকাশ জরুরি। আমরা তরুণরা আমাদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সংরক্ষক হতে পারি। আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে লুকিয়ে থাকা ঐতিহাসিক গৌরব, সঙ্গীত, শিল্প, এবং আচার-অনুষ্ঠানকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তরুণদের সৃজনশীলতার মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক স্তরে আমাদের সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে পারি এবং বিশ্বায়নের যুগে নিজেদের পরিচয় বজায় রাখতে পারি।

পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা :

বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন একটি গুরুতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং বাংলাদেশও এর প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। আমরা তরুণ প্রজন্ম পরিবেশ রক্ষায় আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারি। বৃক্ষরোপণ, কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার করে আমরা একটি পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ গড়তে পারি। একইসঙ্গে আমাদের তরুণদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

মানসিক স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন :

আমাদের তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য বর্তমানে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশা আর উদ্বেগ আমাদের প্রজন্মের মধ্যে ক্রমশ বাড়ছে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যসেবার অব্যবস্থা দূর করে, মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করা গেলে আমরা একটি শক্তিশালী ও সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারব।

পরিশেষে, আমি একজন তরুণ হিসেবে বিশ্বাস করি যে, আমাদের প্রজন্মের উদ্ভাবনী চিন্তা, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী দেশের সংস্কার এবং উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি হতে পারে। আমরা একটি উন্নত, বৈষম্যহীন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে পারি, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হবে এবং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। আমাদের তারুণ্যই হবে দেশের ভবিষ্যতের আলোকবর্তিকা, যা আমাদের জাতির উন্নয়ন এবং সফলতার পথে অগ্রসর করবে।

লেখক,
নাম : মো: রাকিবুল ইসলাম
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : ঢাকা কলেজ, ঢাকা

 

আরও পড়ুন

সিলেট সাহিত্য কেন্দ্র-এর চতুর্থ মাসিক সাহিত্যসভা ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন
Print
Email

সম্পর্কিত খবর

জামিন পেয়েছেন শফিক রেহমান
এক যুগ পর সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া
অচল রাজধানী, ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধ
আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক আমি এমনটি বলিনি
ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ
আইসিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন
সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির শঙ্কা, হতে পারে বৃষ্টি
প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দেব: আইন উপদেষ্টা
মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আসতে দেওয়ার দাবি সাদপন্থিদের
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩২ বছর করে অধ্যাদেশ