ইংল্যান্ডের ফার্মেসিতে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হতে যাচ্ছে এক নতুন ধরনের ক্যান্সার শনাক্তকারী পরীক্ষা, যার নাম ‘স্পঞ্জ অন আ স্ট্রিং’। এটি খাদ্যনালীর ক্যান্সারের প্রাথমিক ধাপ শনাক্ত করতে সাহায্য করবে। সরকারের ১০ বছরের স্বাস্থ্য পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে শত শত মানুষকে ফার্মেসিতে গিয়ে দ্রুত ও সহজভাবে তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি যাচাই করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কীভাবে কাজ করে এই পরীক্ষা
এই পরীক্ষাটি একটি ক্যাপসুল আকারের যন্ত্র ব্যবহার করে, যেটি এক গ্লাস পানি দিয়ে খেয়ে ফেলতে হয়। ক্যাপসুলটি পেটে গিয়ে প্রসারিত হয় এবং একটি সূতার সাহায্যে সেটি আবার মুখ দিয়ে টেনে বের করে আনা হয়। তখন এতে সংযুক্ত কোষ সংগ্রহ করা হয়, যেগুলো পরে পরীক্ষাগারে বিশ্লেষণ করা হয়।
এর মাধ্যমে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ব্যারেটের খাদ্যনালী রোগে আক্রান্ত কি না। এই রোগটি খাদ্যনালী ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। এটি সাধারণত অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা বুক জ্বালাপোড়ার কারণে হয়।
কারা পাবেন এই পরীক্ষা
এই পরীক্ষা মূলত তাদের জন্য, যারা:
-
নিয়মিত বুক জ্বালায় ভোগেন,
-
নিজেরাই ওষুধ খেয়ে উপশম পাওয়ার চেষ্টা করেন,
-
কিন্তু কখনো জিপি বা চিকিৎসকের কাছে যাননি।
ফার্মাসিস্টরা এমন ব্যক্তিদের শনাক্ত করবেন এবং তাদের এই পরীক্ষার আওতায় আনবেন।
পরীক্ষার পেছনের উদ্দেশ্য
এই পরীক্ষার লক্ষ্য হলো ব্যারেট রোগের রোগীদের আগেভাগে শনাক্ত করা, যাতে ক্যান্সারে রূপ নেওয়ার আগেই চিকিৎসা শুরু করা যায়।
এখন পর্যন্ত এই পরীক্ষা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এবার তা ফার্মেসিতে নিয়ে আসা হচ্ছে, যাতে আরও বেশি মানুষ সহজে পরীক্ষা করাতে পারেন।
লন্ডন ও পূর্ব মিডল্যান্ডস অঞ্চলের প্রায় ১,৫০০ জন মানুষকে পরীক্ষার আওতায় আনা হবে। এটি একটি পাইলট প্রকল্প, যা আগামী দুই বছর ধরে চলবে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কী বলছেন
হেলথ ক্যান্সার ইউকে-এর চেয়ারম্যান মিমি ম্যাককর্ড বলেন, “খাদ্যনালীর ক্যান্সার ভয়াবহ হতে পারে। যখন এটি ধরা পড়ে, তখন অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। কিন্তু আগেভাগে শনাক্ত করতে পারলে জীবন রক্ষা সম্ভব।”
এনএইচএস-এর ক্যান্সার পরিচালক অধ্যাপক পিটার জনসন বলেন, “এখন মানুষ যেখানে বাজার করতে যায়, সেই হাই-স্ট্রিট ফার্মেসিতে পরীক্ষা করানোর সুবিধা থাকায় অনেকেই সহজেই পরীক্ষা করাতে পারবে। এতে তাদের মানসিক প্রশান্তিও আসবে।”
তিনি আরও বলেন, “যাদের ব্যারেটের রোগ শনাক্ত হবে, তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে, যাতে পরবর্তীতে কোষে ক্যান্সারজনিত পরিবর্তন দ্রুত ধরা পড়ে।”
যদি পরীক্ষায় প্রাক-ক্যান্সার কোষ পাওয়া যায়, তাহলে এন্ডোস্কোপি অথবা রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন নামক চিকিৎসার মাধ্যমে সেই কোষগুলো সরিয়ে ফেলা হবে।
কেন এই উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ
যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর প্রায় ১০,০০০ মানুষ খাদ্যনালী ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ রোগী ক্যান্সার ধরা পড়ার সময় অনেক দেরিতে চিকিৎসা পান। ফলে প্রতি ৫ জনের মধ্যে কেবল একজন রোগী বেঁচে থাকেন। এজন্য প্রাথমিকভাবে ক্যান্সার শনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।
সরকার কী বলছে
জনস্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাশলে ডাল্টন বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে মানুষ যেন নিজ এলাকায়, সহজে ও দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পায়। এই প্রকল্প তারই বাস্তব উদাহরণ।”
তিনি বলেন, “যদি মাত্র ১০ মিনিটে স্থানীয় ফার্মেসিতে ক্যান্সারের ঝুঁকি চিহ্নিত করা যায়, তাহলে এটি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে।”