যুক্তরাজ্যের প্রতিযোগিতা ও বাজার কর্তৃপক্ষ (সিএমএ) একটি তদন্তের পর জানিয়েছে, সাতটি গৃহনির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমন কিছু বাণিজ্যিকভাবে সংবেদনশীল তথ্য একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছে, যা বাড়ির দামকে প্রভাবিত করেছে। এর প্রেক্ষিতে তারা সম্মত হয়েছে যে, তারা যুক্তরাজ্যের সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পে মোট £১০০ মিলিয়ন অনুদান দেবে।
এই সাতটি প্রতিষ্ঠান হলো: ব্যারেট রেড্রো, বেলওয়ে, বার্কলে গ্রুপ, ব্লুর হোমস, পার্সিমন, টেলর উইম্পি এবং ভিস্ট্রি। তবে এসব কোম্পানি স্পষ্টভাবে কোনো ভুল বা অন্যায় স্বীকার করেনি।
সিএমএ জানায়, তারা প্রমাণ পেয়েছে যে এসব কোম্পানি বাড়ির মূল্য, ক্রেতাদের আগ্রহ (যেমন কতজন সম্পত্তি দেখতে এসেছে), এবং ক্রেতাদের জন্য প্রদত্ত বিভিন্ন প্রণোদনার (যেমন উন্নত মানের রান্নাঘর বা স্ট্যাম্প শুল্কের অবদান) মতো বিষয়গুলো নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করেছে। সিএমএ’র মতে, এ ধরনের তথ্য বিনিময় বাজারে প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত করে এবং ভোক্তাদের ক্ষতি করে।
গৃহনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সিএমএকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা এখন থেকে এই ধরনের তথ্য একে অপরের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে না—বিশেষ করে বাড়ি বিক্রির দাম সংক্রান্ত তথ্য।
যদি সিএমএ এই প্রতিশ্রুতিগুলো গ্রহণ করে, তবে সেগুলো আইনত বাধ্যতামূলক হয়ে যাবে। এর মানে, ভবিষ্যতে এসব কোম্পানি প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করেছে কি না, তা আলাদাভাবে তদন্ত করতে হবে না। এই প্রস্তাবের বিষয়ে ২৪ জুলাই পর্যন্ত পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
সিএমএ’র প্রধান নির্বাহী সারা কার্ডেল বলেন, “আবাসন খাত যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এটি সাধারণ মানুষের ব্যয়ের বড় অংশ। প্রতিযোগিতা ঠিকভাবে কাজ করলে দাম কম থাকে এবং ভোক্তাদের আরও বিকল্প থাকে।”
তিনি আরও বলেন, “এই তদন্তের মাধ্যমে আমরা দেখেছি, কোম্পানিগুলো আইন মেনে চলতে ও সংবেদনশীল তথ্য ভাগ না করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছে।”
এই £১০০ মিলিয়নের অনুদানটি চারটি আলাদা অঞ্চলের সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন প্রকল্পে ব্যয় হবে এবং এতে নিম্ন আয়ের মানুষ, প্রথমবারের মতো বাড়ি কিনতে চাওয়া মানুষ এবং সমাজের দুর্বল জনগোষ্ঠী উপকৃত হবেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই অর্থে শত শত নতুন বাড়ি নির্মাণ সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, সিএমএ ২০২৪ সালে এই তদন্ত শুরু করে, যখন তারা বাড়ি নির্মাণে বাজারব্যবস্থায় সমস্যার প্রমাণ খুঁজে পায়। তদন্তে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যে নতুন বাড়ির সরবরাহ কমে গেছে, যার পেছনে নানা কারণ রয়েছে।
লেবার পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ইংল্যান্ডে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ১৫ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করবে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বছরে অন্তত ৩ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ করতে হবে—যা অতীতে কখনও অর্জন করা যায়নি।
এদিকে, কিছু মন্ত্রী বলছেন, তারা পরিকল্পনা ব্যবস্থার সংস্কার করে বাজারকে চাঙ্গা করবেন যাতে বেসরকারি ডেভেলপাররা নতুন আবাসন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে উৎসাহ পায়।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় কাঠ, কংক্রিট ব্লকসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, যার প্রভাব এখনো নির্মাণ শিল্পে রয়ে গেছে। বর্তমানে বাড়ি নির্মাণের খরচ কিছুটা কমলেও কাঁচামাল ও দক্ষ শ্রমিকের সংকটে খরচ এখনো তুলনামূলক বেশি রয়ে গেছে।