Uk Bangla Live News | Stay updated with UK Bangla Live News

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: মাসের শেষে খালি পকেট, কপালে চিন্তার ভাঁজ

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, Uk Bangla Live News
সুষ্মিতা ভট্টাচার্য্য মৌ
সুষ্মিতা ভট্টাচার্য্য মৌ

“বাজারে এক হাজার টাকা নিয়ে গেসি, ঠিক মতো দুই বেলার বাজার করতে পারি নাই। ছোটবাচ্চা মাংস খাইতে চায়, দিতে পারি না। বউ ঠিকমতো কথা কয় না,মুখ ফুলিয়ে থাকে, বউকে খুশি করার মতো সাধারণ গিফট করতে পারি না।
ছেলের জন্য একজোড়া ভালো জুতো কিনতে পারি না, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। সরকার তো বড়লোকের জন্য, আমাদের জন্য না,” বলছিলেন এক অসহায় বাবা।

সাধারণ মানুষের এই হাহাকারে স্পষ্ট হয় যে সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বর্তমান সরকারের জন্য কতটা চ্যালেন্জ।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে প্রকৃতি ও মানুষের জীবন যেমন দগ্ধ হয়ে হচ্ছে, ঠিক একইভাবে গত কয়েক মাস ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি  খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবন চিন্তায় দগ্ধ করছে। গত কয়েক মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের  দাম যে হারে বেড়েছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় তাদের দৈনন্দিন জীবন ধারন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি মানুষের জীবনে একটি গভীর এবং যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব ফেলে।

যে কোনও দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে আন্তর্জাতিক বাজারের সাপেক্ষে দেশটির নিজস্ব মুদ্রার মানের উপর। মুদ্রাস্ফীতির অর্থ টাকার দাম পড়ে যাওয়া যার ফলে হু হু করে বৃদ্ধি পায় জিনিসপত্রের দাম।
কোনও দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রতিবন্ধক এই মুদ্রাস্ফীতি। সামষ্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে মুদ্রাস্ফীতির ফলে সঞ্চয় হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগ কমে যায়।
ব্যষ্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে বহু কষ্টে সংসার চালাতে গিয়ে মানুষ দুশ্চিন্তায় ভোগে, সমাজে অস্থিরতা বেড়ে যায়। মুদ্রাস্ফীতি সমাজের বেশিরভাগ লোকের কেবল ক্ষতিই করে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় অনেকেই তাদের খরচের লাগাম টেনে ধরতে বাধ্য হন। সমাজের আর্থিক ভাবে দুর্বল সম্প্রদায়গুলি এক চরম দুর্দশার সম্মুখীন হচ্ছে কারণ মুদ্রাস্ফীতি এবং বাংলাদেশি টাকার পতনশীলতা এই সকল মানুষের বেঁচে থাকাকে এক সংগ্রামে পরিণত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে উচ্চ মূদ্রাস্ফীতির হার অব্যাহত থাকতে পারে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী পণ্য মূল্যের গতিবিধি, অভ্যন্তরীণ আর্থিক ও মুদ্রানীতির অবস্থান এবং বিনিময় হারের অস্থিরতা থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিসহ বিভিন্ন কারণে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার বিষয়।

এক দিকে বর্ধিত মূল্যের দরুন সমাজের দরিদ্রতর অংশের মানুষ তাঁদের খাদ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত চাহিদার সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হচ্ছেন অন্যদিকে গ্যাসের মতো অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি দেশটির সকল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ডলার সংকট ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের হিসেবে দেশের ৫১টি ব্যাংক বড় ধরণের ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের অর্থনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
অবকাঠামোগত সংকট, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। বাংলাদেশে কার্যকর বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশের অভাব রয়েছে।বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্তের ফল।
কোনো বিনিয়োগকারীই হুট করে কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। বিশ্বের যেসব দেশে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও সবচেয়ে কম বাংলাদেশ তাদের মধ্যে একটি।
ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও ৯ শতাংশেরও কম হওয়ার কারণে আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ব্যাংক ঋণ অথবা বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করতে হয়।

খেলাপি ঋণ বাড়লে খেলাপির ধারণ অনুযায়ী সর্বোচ্চ শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে ব্যাংক ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। এ দিকে প্রভিশন ঘাটতির কারণে ব্যাংকগুলোর পুঁজি ও রিজার্ভ বা সংরক্ষিত তহবিলের একটি অংশ নন-পারফর্মিং সম্পদে (যে সম্পদ থেকে কোনো আয় আসে না) পরিণত হচ্ছে যা ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।ব্যাংকিং সেক্টর খেলাপি ঋণভারে জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
ফলে উদ্যোক্তাগণ ব্যাংক থেকে অর্থায়ন সংগ্রহের ক্ষেত্রে তেমন একটা সহায়তা পাচ্ছেন না। শেয়ার মার্কেটকে কার্যকরভাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।
উন্নত দেশগুলোতে উদ্যোক্তাগণ দীর্ঘমেয়াদি ঋণের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেন না। তারা শেয়ার মার্কেট থেকে দীর্ঘমেয়াদি পুঁজি সংগ্রহ করে থাকেন।
কিন্তু আমাদের দেশের শেয়ার বাজার এখনো বিনিয়োগকারীদের আস্থার স্থল হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তাগণ শেয়ার বাজারে তাদের কোম্পানির শেয়ার ছাড়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী হন না।

বেশি টাকা ছাপলেই সম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, শুধু নগদ অর্থের যোগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ সম্পদের উৎপাদন ও যোগান বৃদ্ধি ছাড়াই অর্থ সঞ্চালন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যদি আরও বেশি টাকা ছাপানো হয়, তাহলে পণ্য ক্রয়ের জন্য ভোক্তার হাতে অধিক অর্থের যোগান থাকে কিন্তু বাজারে পূর্বের পরিমাণ পণ্য থাকে। উৎপাদন যখন হ্রাস পায় তখন অর্থ ছাপানো বন্ধ করলেও স্ফীতি অব্যাহত থাকে।
এতে দেশের প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী হয়। তখন সরকারী বিল ও বন্ডের মূল্য হ্রাস পায়। ফলে মানুষ বন্ডে বিনিয়োগ বা পূর্বে ক্রয়কৃত বন্ড ধারণ করতে নিরুৎসাহিত হয়। বন্ড বিক্রি করতে সরকারকে সুদহার বাড়াতে হবে যা আরো স্ফীতি তৈরি করে।
যদি স্ফীতি খুব বেশি হয় তাহলে লেনদেন করাই কঠিন হয়ে পড়ে। সকাল-বিকাল মূল্য পরিবর্তন হতে থাকে।
১৯২৩ সালে জার্মান হাইপারইনফ্লেশনে দ্রব্যের মূল্য এত দ্রুত বাড়ত যে, শ্রমিকদের দিনে দুবার দুই রেটে মজুরি পেত। এতে দেশে উচ্চ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। বিনিয়োগের অর্থ ও মানসিকতা হ্রাস পায়। ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলাবাজারে সরকারি ঋণপত্র বিক্রি করে কিংবা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য নগদ জমার অনুপাত বা সংরক্ষণ বাড়িয়ে দিয়ে ব্যাংক সৃষ্ট অর্থের পরিমাণ কমাতে চেষ্টা করে।
এতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ঋণ দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আসে। সরকার কর বাড়িয়ে দিলে কিংবা নতুন নতুন কর আরোপ করলে মানুষের ব্যয়যোগ্য আয়ের পরিমাণ কমে যাবে। ফলে বাজারে আসা অতিরিক্ত মুদ্রা বেরিয়ে যাবে। এছাড়া সরকার বিভিন্ন অনুৎপাদনশীল খাতে খরচ কমিয়ে অন্যদিকে বাজারে চাহিদা মতো পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে উৎপাদনশীল খাতে ভর্তুকি বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতির সময় বাজারে দ্রব্যের যোগান বাড়াতে আমদানির পরিমাণ বাড়ানো যেতে পারে। এতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমতে পারে। এ জন্য মুদ্রাস্ফীতির সময় সরকার আমদানি শুল্ক কমাতে পারে।

কেউ যদি টিআইএন নম্বর গ্রহণ করার পর নিয়মিত রিটার্ন দাখিল না করেন তাহলে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হবে। টিআইএনধারীদের যাবতীয় তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সংরক্ষিত আছে।
ট্যাক্স আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের টেরিটোরিয়াল কাভারেজ বাড়াতে হবে। শহরে তো বটেই এখন গ্রামাঞ্চলেও অনেক লোক আছেন যারা কর প্রদানযোগ্য। তাদের চিহ্নিত করে কর নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
যারা আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের সামর্থ্য রাখেন তাদের কাছ থেকে আয়কর ও ভ্যাট আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কর প্রদানযোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে করের আওতায় আনার ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে। এজন্য প্রশাসনযন্ত্রের দক্ষতা বাড়াতে হবে।
বাজারের ওপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। অসাধু ব্যবসায়ী যাতে তার ইচ্ছামতো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য দেশের জনগণকেও সচেষ্ট থাকতে হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে সাধারণ ও নিন্ম আয়ের মানুষের ভালোভাবে বেঁচে থাকার অধিকার ও নিরাপত্তা

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি

আরও পড়ুন

সিলেটে যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ থাকবে না শনিবার

Print
Email

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ সংবাদ

WhatsApp Image 2025-05-24 at 6.54.35 PM
ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফার্স্ট সিটিজেন্স অ্যালায়েন্সের অভিষেক
ব্রিটিশ বাংলাদেশি ফার্স্ট সিটিজেন্স অ্যালায়েন্সের অভিষেক
untitled-1-20250524165133
সিরিজ ড্র করতে না পেরে নিউজিল্যান্ড 'এ' দলের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ 'এ'
সিরিজ ড্র করতে না পেরে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের কাছে হেরে গেল বাংলাদেশ ‘এ’
nyt-20250524093315
একদিনে প্রায় ৮০০ যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিল রাশিয়া ও ইউক্রেন
একদিনে প্রায় ৮০০ যুদ্ধবন্দিকে মুক্তি দিল রাশিয়া ও ইউক্রেন
image-552650-1748080136
কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ
কানাইঘাট সীমান্ত দিয়ে ২১ জনকে পুশ-ইন করেছে বিএসএফ
2_20250524_141223171
যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ
যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের ১৫০০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ
2c99b2d114850a95c31512d9031a3184559624c9509f7b72
লন্ডনে ভয়াবহ আগুনে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু, একজন গ্রেপ্তার
লন্ডনে ভয়াবহ আগুনে একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু, একজন গ্রেপ্তার

সম্পর্কিত খবর