লাশের গন্ধে মলিন ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকা। প্রিয়জন হারানোর তীব্র বেদনায় শুকিয়ে গেছে চোখের পানি। গাজায় টানা ১ বছর ধরে চলা নৃশংসতা বর্বরতার সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ইসরাইলি। দখলদার বাহিনীর আগ্রাসনে যেমন ধ্বংস হয়েছে বর্তমান প্রজন্ম, তেমনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মও সম্মুখীন হয়েছে অপূরণীয় ক্ষতির।
ইসরাইলের টানা ১২ মাসের আগ্রাসনে প্রাণ গেছে প্রায় ৪২ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনির। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মৃতের হার গাজার মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশেরও বেশি। যাদের মধ্যে আবার প্রায় ১৭ হাজারই শিশু। নিহতদের মধ্যে ১৭১ জন নবজাতক শিশুও রয়েছে। এছাড়া, অভিভাবকহীন হয়ে গেছে প্রায় ২৬ হাজার শিশু।
গাজায় বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ১৯ লাখের বেশি, যা উপত্যকাটির মোট বাসিন্দার ৯০ শতাংশ। মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের বেশি বিপর্যয়কর খাদ্যসংকটের মধ্যে রয়েছে।
দখলদার বাহিনীর হাত থেকে রক্ষা পায়নি হাসপাতালও। গেল এক বছরে অন্তত ৫১৬টি হামলা হয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোর ওপর। এতে নিহত হয়েছেন প্রায় ১ হাজার স্বাস্থ্য কর্মী। এছাড়া, হামাসকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগে নেতানিয়াহু বাহিনী হামলা চালিয়েছে গাজার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেবা প্রতিষ্ঠানের ওপরও। প্রাণ গেছে প্রায় ৩শ স্বেচ্ছাসেবীর।
অন্যদিকে মিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) দেয়া তথ্যমতে, পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইসরাইলি হামলায় মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন অন্তত ১২৮ সংবাদকর্মী। যাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই বয়স ৪০ বছরের কম। এদের মধ্যে আবার ১১ শতাংশই নারী সাংবাদিক।
গাজায় এখনো নিখোঁজ রয়েছেন ১০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫ লাখ বাসিন্দা। আহত ৯৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। বিশ্লেষকদের মতে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি না হলে গাজা উপত্যকা পরিণত হতে পারে বিশাল গণকবরে।
অনলাইন গণমাধ্যম এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরে গাজার ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। আনুমানিক ২ লাখ ২৭ হাজার ৫৯১টি আবাসিক ইউনিট ধ্বংস হয়েছে। উপত্যকার ৬৮ শতাংশ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৯টি বন্ধ হয়ে গেছে; আরও ১৭টি চলছে খুঁড়িয়ে।